প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিজেদের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাবে এবং একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে। বিজিবি দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে বিশেষ দরবারে ভাষণে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবি বাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁর সরকার এ-সংক্রান্ত আইন পাস করেছে। ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারির বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডকে বাহিনীর ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে সময় সরকার গঠনের পরপরই এ রকম ন্যক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। সবার সহযোগিতায় সেই সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবির অপারেশনাল কার্যক্রম বেগবান ও গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি বিজিবির পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। বিজিবির নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী চারটি রিজিওন সদর দপ্তর স্থাপন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এ বাহিনীকে আরও গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার ২৩৪ কর্মী নিয়োগ করে বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, বিজিবিতে ৮৮তম ব্যাচে প্রথমবারের মতো ৯৭ জন নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৯০তম ব্যাচে ১০০ নারী সৈনিক ভর্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, ‘বিজিবিতে নারী সৈনিক নিয়োগের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম।’ ২২১ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের মোকাবিলা করতে গিয়ে এ বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য শাহাদতবরণ করেন। আমি তাঁদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’ প্রধানমন্ত্রী বিজিবির পূর্বসূরি ইপিআরের সদস্য দুজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফসহ ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীকের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করার কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী পুনর্গঠনের পর বিজিবি সদর দপ্তরে নতুন পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল আয়োজন দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে সবাই বাহিনীর নিজস্ব শৃঙ্খলার বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নেবে এবং চর্চা করবে।’ তিনি বলেন, ‘গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় আপনারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা, মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা, রামুর বৌদ্ধপল্লির নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন, পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ছিটমহলবাসীকে পুনর্বাসনে আপনাদের পদক্ষেপ বিজিবির সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করছে।’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিজিবির ৫৯ জন সদস্যের মধ্যে বিজিবি পদক বিতরণ করেন। বিশেষ দরবারে আরও বক্তব্য দেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.