বখাটের প্রেমের ফাঁদে ঘর ছেড়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো স্কুলছাত্রী রীমা (১৪)। মঙ্গলবার বিকালে তাড়াইল উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের বরুহা রাজঘাট এলাকার নরসুন্দা নদী থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রীমা পার্শ্ববর্তী করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের জাটিয়াপাড়া গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার কন্যা এবং স্থানীয় ইচ্ছাগঞ্জ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। অন্যদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত বখাটে আবদুল হাকিম (২৬) কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। পুলিশ হেফাজতে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বখাটে আবদুল হাকিম একই গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। এদিকে স্কুলছাত্রী রীমা আক্তারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে ইচ্ছাগঞ্জ বাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে ইচ্ছাগঞ্জ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, গুজাদিয়া আবদুল হেকিম উচ্চ বিদ্যালয়, জাটিয়াপাড়া মাদ্রাসা এবং বেসিক কিন্ডারগার্টেনের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী ছাড়াও এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। স্থানীয়রা জানান, নিহত স্কুলছাত্রী রীমার বাবা হুমায়ুন মিয়া সস্ত্রীক ঢাকায় থাকেন। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের গাড়ির চুক্তিভিত্তিক চালক। মেয়ে রীমা দাদার সঙ্গে বাড়িতে থেকে স্থানীয় ইচ্ছাগঞ্জ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। একই গ্রামের বখাটে আবদুল হাকিম চাচা পরিচয়ে নিয়মিত রীমাদের বাড়িতে যেতো। এ সময় খালি বাড়িতে থাকা রীমার সঙ্গে সে নানা গল্পগুজব করতো। সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি হওয়ায় বাড়ির লোকজন এ নিয়ে কোনো সন্দেহ করতো না। বাড়িতে অবাধে আসা-যাওয়ার সুযোগে বখাটে আবদুল হাকিম রীমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও তাতে সে রীমার সাড়া পায়নি। কিন্তু নাছোড় বান্দার মতো লেগে থাকে হাকিম। একপর্যায়ে হাকিমের প্রেমের ছলে বিভ্রান্ত হয় রীমা। কপট প্রেমের ফাঁদে ফেলে রীমাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায় হাকিম। রোববার রাতে হাকিমের ডাকে ঘর ছাড়ে রীমা। কিন্তু সে যাত্রা যে অন্তিম যাত্রা হবে তা জানা ছিলো না রীমার। ঘর বাঁধার সুখস্বপ্ন দেখিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ফেলে দেয়া হয় নরসুন্দা নদীতে। লাশটি ভাটির দিকে ভেসে যাওয়ার সময় মঙ্গলবার বিকালে তাড়াইলের বরুহা রাজঘাট এলাকায় এলাকাবাসীর নজরে পড়ে। এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে তাড়াইল থানার এসআই হযরত আলীর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে স্কুলছাত্রী রীমার লাশ উদ্ধার করে। এসআই হযরত আলী জানান, লাশের পেটের বাম পাশে কাটা থাকায় নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। এছাড়া শরীরের অন্যান্য স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ধারণা, ধর্ষণ শেষে রীমাকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া লাশটি গুম করার জন্য পেট কেটে নদীতে ফেলে দেয়া হয় যেন লাশটি ভেসে না ওঠে তলিয়ে যায়। এদিকে বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহত স্কুলছাত্রী রীমা আক্তারের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে পরিবারের লোকজনের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। তাড়াইল থানার ওসি খোন্দকার শওকত জাহান জানান, হত্যাকাণ্ডটি মূলত করিমগঞ্জ থানা এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। লাশটি ভাসতে ভাসতে তাড়াইল থানা এলাকায় আসে। ঘটনাটি প্রেমঘটিত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কথিত প্রেমিক আবদুল হাকিম পুলিশ হেফাজতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলেও ওসি জানান। এদিকে করিমগঞ্জ থানার পক্ষ থেকেও গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়েছেন করিমগঞ্জ থানার ওসি মো. জাকির রব্বানী।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.