বেসিক ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির ইস্যুটি দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই ঘটনা নিয়ে সংসদীয় কমিটিতেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছিল। অথচ এত বড় মাপের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত যিনি, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। বেসিক ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন এ পর্যন্ত মামলা করেছে ৫৬টি, অত্যাশ্চর্য কেলেঙ্কারির মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নাম নেই কোনোটিতেই। তার চেয়ে বড় কথা, মামলাগুলো মূল ঘটনা এড়িয়ে শুধু ঋণের নামে ২ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা কোনো যুক্তির মধ্যেই পড়ে না যে, ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমাণ দালিলিক প্রমাণ পাওয়ার পরও দুদক তাকে আসামি করেনি। দ্বিতীয় কথা, যে কোনো মামলা দায়েরের পর ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে সোয়া দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও তদন্ত শেষ করা দূরের কথা, এ ব্যাপারে তাগিদও অনুভব করছে না দুদক। উল্টো এক বছর ধরে তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বলাবাহুল্য, ব্যাংক ঋণের অনুমোদন দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। ফলে বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় তৎকালীন চেয়ারম্যান জড়িত ছিলেন কিনা, তদন্তের মাধ্যমে তা বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়। বোঝাই যাচ্ছে, সুষ্ঠু তদন্ত হলে সাবেক চেয়ারম্যান জড়িয়ে যাবেন বলেই বিষয়টিকে হেলাফেলার চোখে দেখা হচ্ছে। দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেছেন, তারা উপরের নির্দেশ ও বিধি অনুযায়ী কাজ করে যাবেন। আবদুল হাই বাচ্চুর ব্যাপারে সেই নির্দেশ পেলেই তারা সংশ্লিষ্ট তথ্য-প্রমাণাদি হাজির করবেন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, সবই হাতে আছে, শুধু সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। আবদুল হাই বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদকে কেন আসামি করা হয়নি, তা জানতে চেয়ে আদালতে রিটও করা হয়েছিল এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রুলও জারি করেছেন। এমনকি আদালত দুদককে এমনও বলেছেন, ব্যাংকের অন্যদের ধরা হবে অথচ প্রতিষ্ঠানটির প্রধানকে ধরা হবে না, তা হতে পারে না। এতকিছুর পরও আবদুল হাই বাচ্চু কেন পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন, তা অনুমান করা খুব কঠিন কিছু নয়।
বোঝাই যাচ্ছে, দুদক কর্তৃপক্ষ চাপের মুখে অথবা কোনো ধরনের লেনদেনের কারণে বিপুলাকার অর্থ কেলেঙ্কারির প্রধান অভিযুক্তকে মামলার বাইরে রেখে চলেছে। দেশে আইনের শাসনের এই হাল সত্যি পীড়াদায়ক। কাদের স্বার্থে অথবা আনুকূল্যে হাই সাহেব দায়মুক্ত থাকছেন, তাদের চিহ্নিত করা এখন উচ্চ মহলের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে গেছে। একইসঙ্গে দুদকের কে বা কারা রাজনৈতিক অথবা অন্য কোনো প্রভাবে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না, তাদেরকেও শনাক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একজন ব্যক্তি, তা তার পদমর্যাদা বা সামাজিক অবস্থান যত উচ্চই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন না। তাছাড়া বেসিক ব্যাংকের এই সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেয়া না যায়, তাহলে সেই উদাহরণ অন্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একই ধরনের অন্যায়ে উৎসাহিত করতে পারে বৈকি!
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.