দলীয় জাতীয় সম্মেলনের পর সময়টা ভালোই কাটছে ডেমোক্রেট দল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন নানা বিতর্কে হাবুডুবু খাচ্ছেন তখন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন হিলারি। জাতীয় পর্যায়ে ও যেসব রাজ্যে লড়াই খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে তিনি ভালো অবস্থানে আছেন। এখন পর্যন্ত যতগুলো জনমত জরিপ হয়েছে তার সবগুলোতে এগিয়ে আছেন তিনি। নির্বাচন এখনও অনেক দূরে। এখনই এসব জরিপের ফল নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া কঠিন। তবু জরিপ অব্যাহত আছে। সিএনএন পরিচালিত ইলেক্টোরাল কলেজ ম্যাপ ভোটেও তিনি বাজিমাত করেছেন। রিপাবলিকানদের অনেক রাজ্য তার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। হোয়াইট হাউজের দৌড়ে একজন প্রার্থীর প্রয়োজন হবে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট। কিন্তু সিএনএন ইলেক্টোরাল কলেজ ম্যাপে এরই মধ্যে হিলারি পেয়েছেন ২৭৩টি ভোট। ফলে এ পূর্বাভাস যাচ্ছে হিলারির পক্ষে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে রয়েছে ৪টি ইলেক্টোরাল ভোট। এই রাজ্যটিকে বলা হয় রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের জন্য ব্যাটলগ্রাউন্ড বা যুদ্ধক্ষেত্র। কিন্তু কলেজ ম্যাপে দেখা গেছে নিউ হ্যাম্পশায়ার ডেমোক্রেটদের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। একইভাবে পেনসিলভ্যানিয়ায় রয়েছে ২০টি ইলেক্টোরাল ভোট। এ রাজ্যও ডেমোক্রেটদের প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছে। ভার্জিনিয়ায় রয়েছে ১৩টি ইলেক্টোরাল ভোট। এখানেও ডেমোক্রেটরা সমর্থন পেয়েছেন। এ রাজ্যগুলো দু’দলের জন্যই ‘যুদ্ধক্ষেত্র’। এসব রাজ্য থেকে হিলারি পাচ্ছেন ৩৭টি ইলেক্টোরাল ভোট। এর মধ্য দিয়ে তার মোট ইলেক্টোরাল ভোট দাঁড়াচ্ছে ২৭৩টি। কিন্তু নির্বাচনে জিততে হলে তার প্রয়োজন ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট। সেই হিসাবে সিএনএনের ইলেক্টোরাল। কলেজ ম্যাপে হিলারির জন্য সুসংবাদ দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি ম্যাপের বাকি ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যগুলোর সবটাতে তিনি বিজয়ী হন তাহলেও তিনি প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন না। এজন্য এখন হিলারি ক্লিনটনের প্রতি যেসব রাজ্য ঝুঁকে পড়েছে তার মধ্য থেকে তাকে কমপক্ষে একটিতে জিততে হবে। তবে সিএনএন তার রিপোর্টে বলেছে, এ হিসাব একান্তই পূর্বাভাস। এতে দেখা গেছে হিলারি বিজয়ী হচ্ছেন। তবে আসলে কি হবে তা সামনের অনাগত দিনগুলোই বলে দেবে। এ সময়ে হিলারি ও তার তীব্র, বিতর্কিত প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড, প্রচারণা, বাচনভঙ্গি সবই বলে দেবে কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজের চাবি হাতে সামনে এগিয়ে। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের জন্য সুসংবাদ হলো, আজই নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে তার সামনে প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি সময় আছে। এ সময়ে তিনি নিজেকে যতটা শাণিয়ে নিতে পারেন ততই তার জন্য মঙ্গল। গত কয়েক সপ্তাহে নানা বিতর্কের পর তিনি প্রচারণায় পরিবর্তন আনছেন। এরই মধ্যে আগে যেসব মন্তব্য করে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন তার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তার প্রচারণায় নতুন নতুন অভিজ্ঞ নেতাকে দলভুক্ত করেছেন। ব্যাটলগ্রাউন্ড বা যুদ্ধক্ষেত্র রাজ্যগুলোতে বিজয় অর্জন করার জন্য টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করছেন। নিজের বাচনভঙ্গিতে পরিবর্তন আনছেন। ফ্লোরিডা, ওহাইও, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভ্যানিয়া ও ভার্জিনিয়াতে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে খরচ করছেন ৪০ লাখ ডলার। উল্লেখ্য, যেসব রাজ্য এখনও রিপাবলিকানদের ঘাঁটি বলে ধরা হয় তার সংখ্যা ২০টি। এগুলো হলো আলাবামা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৯), আলাস্কা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩), আরকানসান (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৬), ইডাহো (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৪), ইন্ডিয়ানা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১১), কানসাস (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৬), কেনটাকি (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৮), লুইজিয়ানা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৮), মিসিসিপি (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৬), মন্টানা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩), নেব্রাস্কা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৫), নর্থ ডাকোটা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩), ওকলাহোমা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৭), সাউথ ক্যারোলাইনা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৯), সাউথ ডাকোটা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩), টিনেসি (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১১), টেক্সাস (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩৮), ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৫) ও ওয়েওমিং (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩)। সব মিলিয়ে এসব রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১৫৮টি। রিপাবলিকানদের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে চারটি রাজ্য। সেগুলো হলো অ্যারিজোনা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১১), জর্জিয়া (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১৬), ইউটাহ (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৬)। এ তিনটি রার্জে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৩৩। যেসব রাজ্য ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ এখন পর্যন্ত ৫টি রাজ্যকে ব্যাটলগ্রাউন্ড বা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এগুলো হলো ফ্লোরিডা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ২৯), আইওয়া (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৬), নেভাদা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৬), ওহাইও (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১৮) ও নর্থ ক্যারোলাইনা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১৫)। এ রাজ্যগুলোতে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৭৪টি। ডেমোক্রেটদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে ৬টি রাজ্য। এগুলো হলো কলোরাডো (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৯), মিশিগান (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১৬), নিউ হ্যাম্পশায়ার (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৪), পেনসিলভ্যানিয়া (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ২০), ভার্জিনিয়া (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১৩) ও উইসকনসিন (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১০)। সব মিলে এ রাজ্যগুলোতে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৭২। ডেমোক্রেটদের ঘাঁটি ডেমোক্রেটদের ঘাঁটি বলে পরিচিত ১৭টি রাজ্য। এগুলো হলো ক্যালিফোর্নিয়া (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৫৫), কানেকটিকাট (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৭), দেলাওয়ার (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩), ওয়াশিংটন ডিসি (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩), হাওয়াই (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৪), ইলিনয়েস (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ২০), মেইনে (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৪), মেরিল্যান্ড (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১০), ম্যাচাচুসেটস (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১১), নিউ জার্সি (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১৪), নিউ ইয়র্ক (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ২৯), অরিগন (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৭), রোড আইল্যান্ড (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৪), ভারমন্ট (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৩), ওয়াশিংটন (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১২), মিনেসোটা (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ১০), নিউ মেক্সিকো (ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৫)। সব মিলিয়ে এ রাজ্যগুলোতে ডেমোক্রেটদের ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ২০১।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.