নৃশংস জঙ্গি হামলার এক মাস ২০ দিন পার হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনও হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সার্বক্ষণিক পাহারায় রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এক মাস ২০ দিন পরও সব আলামত আগের মতোই আছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন অতিথিদের জন্য রান্না ঘরে তৈরি খাবার যেখানে ছিল এখনও সেখানে পড়ে আছে। সেলফে রাখা খাবারও পড়ে আছে। টেবিলে সাজানো খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিকে সেদিকে। মেঝেতে রক্তের দাগ শুকিয়ে গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মুহাম্মদ ইউসুফ আলী মানবজমিনকে বলেন, জঙ্গিদের জিম্মি ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত হলি আর্টিজানের ভিউ অক্ষত রাখা হয়েছে। কেবল মাত্র লাশগুলো সরানো হয়েছে। বাকি সবই যে অবস্থায় ছিল এখনও সে অবস্থায় রয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তদন্তকারী সংস্থার লোকজন বেশ কয়েকবার তা পরিদর্শন করেছেন। তৈরি হয়েছে জব্দ তালিকাও। তদন্তের দায়িত্বে নিয়োজিতরা যতদিন প্রয়োজন মনে করবেন ততদিন তা পুলিশ পাহারায় রাখা হবে। রেস্তরাঁ পরিদর্শনকারী সূত্র জানিয়েছে, হলি আর্টিজান বেকারি ও লেকভিউ ক্লিনিকের একমাত্র প্রধান ফটকের ভেতরে সামনের চত্বরেই এলোমেলোভাবে পড়ে আছে ঘটনার দিন আগত অতিথিদের ৭টি প্রাইভেটকার। এর মধ্যে অভিযানের সময় সাঁজোয়া যানের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুটি প্রাইভেটকার। আরো দুটি মোটরসাইকেল ও ডজনের বেশি সাইকেল পড়ে রয়েছে। খোলা চত্বরের এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বসার চেয়ার। পাশাপাশি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেকভিউ ক্লিনিক অক্ষত থাকলেও গ্রেনেড, গুলি ও সাঁজোয়া যানের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হলি আর্টিজান দাঁড়িয়ে আছে। অভিযানের সময় হলি আর্টিজানের সামনের লোহার কাঠামোয় তৈরি ছোট ঘরটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। এটি এখনও আগের অবস্থায় আছে। মেঝেতে পড়ে আছে চালার টুকরোর অংশ, লোহা-লক্কড়, যন্ত্রপাতি ও নানা জিনিসপত্র। রেস্তরাঁর ওপর ও নিচতলার কাঁচগুলো ভাঙাচোরা। সামনের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলোমেলো ও ওলট-পালট হয়ে পড়ে আছে চেয়ার, টেবিল, গ্যাস সিলিন্ডার। নিচ তলার মেঝেতে কাঁচের টুকরো ছড়ানো ছিটানো। টেবিলের ওপর চেয়ার। কাঁচের জগ, গ্লাস ও জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। মেঝের একাধিক জায়গার পুরো অংশ জুড়ে শুকনো ও জমাট বাঁধা রক্তের দাগ। তার ওপর জুতা, সেন্ডেল। এই ঘটনার পর থেকে সেখানে সাধারণ কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে আর্টিজানের সামনে পুলিশ পাহারা ও ব্যারিকেড রয়েছে। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকেই গুলশান থানা পুলিশ আর্টিজান রেস্তরাঁয় সারাক্ষণ নিবিড় পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। আদালতের আদেশে সেখান থেকে তিনটি প্রাইভেটকার মালিকদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি সব কিছুই ঘটনার পর থেকে একইভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.