বহুল আলোচিত ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার এক যুগ পূর্ণ হল আজ। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো ওই হামলায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নিহত হয়েছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২৪ নেতাকর্মী। সেই গ্রেনেড হামলার প্রকৃত রহস্য এখন পর্যন্ত উদ্ঘাটিত না হলেও এটা শুরু থেকেই স্পষ্ট যে, তখনকার প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাই ছিলেন হামলার পরিকল্পনাকারীদের টার্গেট। পৃথিবীতে এমন কলংকজনক ঘটনার নজির পেতে হলে বিস্তর ঘাঁটতে হবে ইতিহাস।
এতদিনে এ ঘৃণ্য ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনার নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া উচিত ছিল অবশ্যই। দুর্ভাগ্যজনক, তা যে হয়নি, এর পেছনে রয়েছে নানা স্বার্থবাদী অপচিন্তা। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে এ সংক্রান্ত মামলা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে নানাভাবে। ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে অনেক তথ্যও। এটা এখন সবারই জানা, ঘটনার পর জজ মিয়া নামের এক নিরীহ ব্যক্তিকে আটক করে তার কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করে ঘটনার প্রকৃত কুশীলবদের আড়াল করার চেষ্টা করেছিল খোদ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এজন্য সিআইডির সাবেক চার তদন্ত কর্মকর্তার দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, যদিও তখনকার অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তিও এর দায় এড়াতে পারেন না।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার কাজ এক যুগ ধরে ঝুলে আছে। এরই মধ্যে চারটি সরকার ক্ষমতায় এসেছে, একাধিক বিচারক মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। দ্বিতীয় দফার চার্জ গঠনের চার বছর পরও মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। বিচারিক কার্যক্রমে এ দীর্ঘসূত্রতার জন্য রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের বাইরে থাকা এ মামলার পলাতক ১৮ আসামিকে এখনও ফিরিয়ে আনতে পারেনি সরকার। তবে চলতি বছরেই মামলাটির নিষ্পত্তির ব্যাপারে আশা প্রকাশ করছে সরকার। আমরাও আশা করছি, সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসবে কারা ছিল পরিকল্পনাকারী, কারা অংশ নিয়েছিল হামলায়। তবে দেখতে হবে কেউ যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হন। দেশবাসীর সামনে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হওয়া জরুরি এবং তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে। তাতে যদি চারদলীয় জোট সরকারের কারও বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা মেলে, তাহলে বিএনপি বা সংশ্লিষ্ট দলকে অবশ্যই তা মেনে নিতে হবে। ওই ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে থাকলে তার দায় সামগ্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট দলের নয়, এ উপলব্ধিও থাকতে হবে সবার। দলের বিশেষ ব্যক্তি বা গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা মানে সমগ্র দলের সংশ্লিষ্টতা নয়- এ উপলব্ধি থেকে সংশ্লিষ্ট দলের হাইকমান্ডের উচিত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
২১ আগস্টের হামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত করা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। এটা সত্য হয়ে থাকলে তা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। রাজনীতি ভয়াবহভাবে দুর্বৃত্তায়িত হলেই এটি সম্ভব। এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ন্যায়বিচারের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরও সজাগ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা ছাড়াও দলের ভেতর থেকে সেই প্রতিহিংসার উপাদান দূর করতে হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থেই রাজনীতি থেকে দূর করতে হবে অপশক্তি ও অপচিন্তা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.