জিজ্ঞাসাবাদে মেঘলার তথ্য
র্যাব হেফাজতে থাকা নতুন ধারার জেএমবির চার নারী সদস্য টার্গেট শুটিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এজন্য তারা গুলি চালানো শেখে গাজীপুরের সাইনবোর্ড হাজীরপুকুর এলাকায়।
জিহাদের প্রস্তুতি পর্বের আওতায় তাদের এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মানারাত বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থী খালেদা পারভীন মেঘলার কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
সে জানায়, তাদের ‘দ্বীনি বোন’ (জঙ্গিদের ভাষায়) ডাক্তার ইসতিসনা আক্তার ঐশীর ল্যাপটপে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ছিল, যা সে মুছে ফেলেছে। গোয়েন্দারা ওই ল্যাপটপের অধিকতর ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে সেসব তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হন। সেখানে কথিত জিহাদের জন্য নিজেকে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় নির্দেশনাগুলো পাওয়া যায়। এসব নির্দেশনার ধরন দেখে গোয়েন্দারা বিস্মিত হয়েছেন।
দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা রোববার যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক শিক্ষার্থী আকলিমা রহমান মণি স্বীকার করেছে হাজীরপুকুর এলাকায় প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা। পরে ধানমণ্ডির একটি বাসায় খেলনা পিস্তল দিয়েও যে কোনো বস্তুকে টার্গেট করে শুটিং প্র্যাকটিস করত। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নতুন ধারার জেএমবির দুই সদস্য মেহেদী ও ফারুক একজন প্রশিক্ষক নিয়ে আসে।
সূত্র জানায়, মেঘলা স্বীকার করেছে যে, তাদের ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনে তারা ‘টর ব্রাউজার’ ব্যবহার করত। এ পদ্ধতির ফলে ডিভাইসে কোনো ধরনের ব্যবহৃত তথ্য থাকে না। ডিলিট করে দিলে এসব তথ্য আর উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কিন্তু গোয়েন্দারা অধিকতর ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে মুছে ফেলা বহু তথ্যই উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন তারা সেগুলো পর্যালোচনা করছেন।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘জিহাদের’ প্রস্তুতি পর্বের অংশ হিসেবে এ চার নারী জঙ্গি ছয় ধরনের নির্দেশনা অনুসরণ করে। সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় এরা ধাপে ধাপে এ পথে আসে। প্রথমে তাদের দাওয়াতি প্রক্রিয়ায় জঙ্গি কার্যক্রমে আনা হয়। তাদের পাখি শিকারের মাধ্যমে গুলি চালানোর প্রশিক্ষণ দেয় জঙ্গিরা। এ সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
সূত্রমতে, জঙ্গি নির্দেশনায় বলা হয় যারা নতুন করে দাওয়াত গ্রহণ করেছে তাদের আনসার (সাহায্যকারী) হিসেবে তৈরি করতে হবে। আর দাওয়াতি ভাই ও বোনদের নিজের বাসায় কিছুদিনের জন্য রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। জিহাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। বিভিন্ন বিধিনিষেধ অনুসরণ করা, প্রস্তুতি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কথিত ‘শহীদ’ অপারেশনে না যাওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে।
সম্প্রতি র্যাবের গোয়েন্দারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক ইসতিসনা আক্তার ঐশী, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আকলিমা রহমান মণি, ইসরাত জাহান মৌসুমী (মৌ) ও খালেদা পারভীন মেঘলাকে গ্রেফতার করে। এরা নতুন ধারার জেএমবির অগ্রভাগে রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ইসরাত জাহান মৌসুমী র্যাবের গোয়েন্দাদের জানায়, নতুন ধারার জেএমবিতে যোগ দেয়ার পর থেকে তারা বাব উল ইসলাম নামে একটি ওয়েবসাইট অনুসরণ করে। এ সাইটের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করত। এর মাধ্যমে তারা আনসার আল মুজাহিদীন ফোরামের সদস্যপদ লাভ করে। এ সাইটটি পাকিস্তান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাইটটির বিষয়ে তাদের ধারণা দেয় দুই জঙ্গি ফারুক ও মেহেদী।
জানতে চাইলে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি খন্দকার লুৎফুল কবীর যুগান্তরকে বলেন, চার নারী জঙ্গির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এদের ব্যবহার করা ডিভাইসের অনেক তথ্যই তারা মুছে ফেলেছিল, যা উচ্চতর প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা যাচাই-বাছাই করে তার ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.