স্পিড বোটে করে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক যারা ঘুরেছেন তারা নিশ্চই দেখেছেন সেই বিশাল লেকের মাঝে অনেক ছোট বড় বিচ্ছিন্ন পাহাড় আছে। এদেরই একটি পাহাড় বা দ্বীপের নাম পেদা টিং টিং। মূলত এটি একটি পিকনিক স্পট। পেদা টিং টিং একটি চাকমা শব্দগুচ্ছ, যার অর্থ হচ্ছে পেট টান টান। খুব করে খাওয়ার পর পেটের যে টান টান অবস্থা হয়, সেটাকেই বলা হয় পেদা টিং টিং।
বেশ গোছানো একটা স্পট, ঢুকতেই চোখে পড়বে বাঁশের আর ছনের তৈরী খুব সুন্দর আধুনিক একটা হোটেল। এটার নামটিও পেদা টিং টিং। বিভিন্ন ডিজাইনের বাশেঁর বেশ কয়েকটা ঘর আছে এখানে, প্রত্যেকটাই পাহাড় আর লেকের সাথে বেশ ভাল মনিয়েছে। এমনই এক পরিবেশ যেখানে খাবার পানিই পাওয়া যাওয়া কথানয়, সেখানে এই রেষ্টুরেন্ট আপনার জন্য চা, কফি আর চিকেন ফ্রাই নিয়ে অপেক্ষা করছে। সত্যিই অবাক করার মত ব্যাপার। এছাড়াও এখানে পাবেন স্থানীয় খাবার “বিগল বিচি”, “কচি বাঁশের তরকারী”, “কেবাং”, “বাম্বু চিকেন”।
এখানে রয়েছে রেস্তোরা, কটেজ, নৌবিহার ব্যবস্থা, সেগুন বাগান এবং অসংখ্য বানরের আবাস। ইচ্ছে করলে মনোজ্ঞ কোন অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করতে পারবেন এখানে। চাইলে রাত্রিযাপনও ব্যবস্থা রয়েছে এখানকার কটেজে। এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি কক্ষ সদৃশ ঘর। চাঁদনী রাতে বিস্তৃত জলরাশি ঘেরা পাহাড়ের উপর রাত্রি যাপন- সত্যিই দুর্লভ।
উল্যেখযোগ্য খাবার- বাম্বু চিকেন বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করা মুরগির মাংস যাকে বাঁশের পাত্রে পরিবেশন করা হয়। বিগল বিচি, বিগল বিচি দেখতে ছোট ছোট দানার মতো- হালকা করে তেলে ভাজা হয়। এমনিতে এর কোনো স্বাদ নেই। এটি মূলত খেতে হয় শুটকি মাছ ও কাঁচামরিচের ভর্তার সাথে। তখনই আসল স্বাদ পাওয়া যায়। কচি বাঁশের তরকারী এটি একটি অসাধারণ আইটেম। রাঙ্গামাটি এসে এই খাবারটি হতে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। অসাধারণ স্বাদ! পুঁই বা অন্যান্য শাকের সাথে এটি রান্না করা যায়, অথবা ভাজি। যে ভাবেই খান না কেন এটি হবে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। কচি বাঁশ খেতে খুবই নরম- মুখে দেওয়া মাত্র গলে যায়। আসলে এগুলোর স্বাদ বলে বুঝানো যাবে না! বুঝতে হলে অবশ্যই খেতে হবে! কেবাং এটি আসলে খাবার রান্নার একটি পদ্ধতি। শক্তসামর্থ বাঁশের খোলের ভেতর শূকর ভরে সেখানে তেল-মশলা দিয়ে বাঁশটিকে পোড়ানো বা ঝলসানো হয়েছে। তবে আপনি শুকর খেতে না চাইলে কাঁচকি বা অন্যান্য মাছ, মাংস ইত্যাদির কেবাং করে খেতে পারেন। এর স্বাদ এবং অভিজ্ঞতা আপনার স্মৃতির পাতায় থাকবে সারাজীবন। কাঁচকি ফ্রাই এটি অবশ্য আদিবাসী কোন খাবার নয়। তবে এর স্বাদ অতুলনীয়। সাধারণ পদ্ধতিতেই বড় বড় কাচকি মাছ তেলের উপর ভাজা হয়। গরম গরম খেতে ভীষন মজার খাবার এটি। রাঙ্গামাটির অনেক হোটেলেই এই খাবারটি পাবেন।
যাবেন যেভাবে- ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন স্থান হতে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। ঢাকা হতে বেশ কয়েকটি বাস প্রতিদিন ছেড়ে যায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। শ্যামলী, সায়েদাবাদ, কলাবাগান হতে প্রতিদিনই গ্রীনলাইন, এস.আলম, ইউনিক সার্ভিস বাসগুলো ছাড়ে। এগুলোর মাধ্যমে সরাসরি চলে যেতে পারেন রাঙ্গামাটি। অথবা ঢাকা বা অন্য জেলা হতে বাস, ট্রেনে কিংবা বিমানে করে যেতে পারেন চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম হতে অনেকগুলো বিলাশবহুল ও লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত। সেগুলোর মাধ্যমেও পৌছতে পারেন রাঙ্গামাটি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.