বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। তবে এখনও কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাই এবার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান বিনার প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধেও। বিনার প্রধানসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. আবদুর রউফকে আহ্বায়ক করে একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইটি) মো. হেমায়েত হোসেন, বিএডিসির অডিট অফিসার (ঢাকা) মো. আবদুল হাই চৌধুরী ও মো. সুলায়মানকে সদস্য করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসআরএসডি প্রকল্পের গবেষণা ক্রয়, প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি, নিম্নমানের এয়ারকুলার বেশি দামে কেনা, জমি কেনার সময় বেশি মূল্য পরিশোধ, কনসালট্যান্ট নিয়োগ না করেই খরচ দেখানো, ভ্রমণ ভাতা, গাড়ি কেনা এবং বরাদ্দে অনিয়ম, আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ, পরিচালক নিয়োগ, আগাম বিল ভাউচার পরিশোধ, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, জমি অধিগ্রহণে আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে এই কমিটি গঠন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির চিত্র। তদন্ত কমিটি দুই দফায় চার দিন করে আট দিন ময়মনসিংহে এসে তদন্ত শেষে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানা যায়, বিনার গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালী করতে এবং উপকেন্দ্রগুলোতে এসআরএসডি শীর্ষক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যেগুলোর মেয়াদ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মহাপরিচালক আবদুস সাত্তার অবসরে যাওয়ার দুই দিন আগে এই প্রকল্পের জন্য পৌনে দুই কোটি টাকার বদলে প্রায় আড়াই কোটি টাকার চেক স্বাক্ষর করেন। প্রকল্পের গবেষণা ও যন্ত্রপাতি কেনার সময়ও তিনি বাজেটের চেয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে এসআরএসডি প্রকল্পের জন্য মোটরগাড়ি কেনায় অনিয়ম, খাগড়াছড়ি উপকেন্দ্রে জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম করেন সাবেক মহাপরিচালক। খাগড়াছড়িতে জমি অধিগ্রহণের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বাজেট থাকলেও তিনি অবৈধভাবে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই অতিরিক্ত দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন। ডিজি ড. শমসের আলী বলেন, ‘আমি কি বসে আছি? এটা একটা ছোট ইস্যু। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানার সুযোগ নেই। কমিটি তাদের মতো করে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে, জাতীয় সংসদে পাসকৃত বিনার নিজস্ব প্রবিধান আছে, সে মতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আস্তে আস্তে ব্যবস্থা নিতে হবে, সময় লাগবে।’এদিকে অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ বিদেশে, কেউ কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, আবার কেউ ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটির প্রধান কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তিনি এই কথা বলতে পারেন না। তদন্তকালে সব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, এখন বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের।’ এব্যাপারে দৈনিক মানবজমিনসহ বিভিন্ন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.