পঞ্চগড় ট্রাক টার্মিনাল অসামাজিক কাজের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ টার্মিনালকে ঘিরে রয়েছে পাঁচটি আবাসিক হোটেল। আবাসিক হোটেলগুলোতেই অসামাজিক কার্যকলাপসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য অবাধে পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে এ অসামাজিক কার্যক্রম সংঘটিত হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন ধরনের চুরি, ছিনতাইয়ের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিশেষ প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টার্মিনালটি শ্রমিকনির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা জুয়া, মাদকগ্রহণ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ায় অনেকের পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। টার্মিনালকে ঘিরে রাখা ছয়টি আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোকছানা, নীরব রেস্ট হাউজ, হোটেল আল-আমিন, হোটেল অভিনন্দন, হোটেল আসফি ও হোটেল রোজ। এসব আবাসিক হোটেলগুলো ও টার্মিনালের আশেপাশে তিনজন মাদক ব্যবসায়ী মাদকের কারবার করেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাক টার্মিনালটি পঞ্চগড় শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি কম থাকায় অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ছে। এছাড়া, ওই টার্মিনালটির পাশে পঞ্চগড় সুগার মিলস থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার লোকের সমাগম হয়। ট্রাক টার্মিনালের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, পঞ্চগড় জেলা শহরের তেলিপাড়া স্থানে প্রায় ১২০ শতক জায়গার ওপর পঞ্চগড় ট্রাক টার্মিনাল অবস্থিত। এ জেলাটি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাথর ও মোটা বালু সরবরাহ করে থাকে। এ ট্রাক টার্মিনালটিতে গড়ে প্রতিদিন ১৪০/১৫০টি ট্রাক অবস্থান করে এবং পাথর, বালু, ধান, ভুট্টা ও চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পরিবহন করে থাকে। জেলার একমাত্র এ ট্রাক টার্মিনালটি এশিয়ান হাইওয়ের পাশে অবস্থিত ও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় খালি ট্রাকগুলো পঞ্চগড়- তেঁতুলিয়া মহাসড়কের উপর রাখায় প্রায়ই পথচারীসহ বিভিন্ন হালকা যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এছাড়া, টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। ট্রাক টার্মিনালের পাশে বিসিক শিল্প নগরী ও চিনিকল অবস্থিত হওয়ায় ট্রাক ও চিনিকল শ্রমিকের সমাগম হয়। প্রতিবেদনে মন্তব্য কলামে বলা হয়েছে, এশিয়ান হাইওয়ের পার্শ্বে অবস্থিত পঞ্চগড় জেলার ট্রাক টার্মিনালটিতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় খালি ট্রাকগুলো পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের উপর রাখায় প্রায়ই পথচারীসহ বিভিন্ন হালকা যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এছাড়া, ওই টার্মিনালটিতে মাদকসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রম সংঘটিত হওয়ায় এর সঙ্গে জড়িত শ্রমিকসহ স্থানীয় যুবক শ্রেণি মাদকাসক্ত হয়ে নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে। প্রতিবেদনে সুপারিশে বলা হয়েছে, পঞ্চগড় জেলার ট্রাক টার্মিনালটি জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে থাকায় সেখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি বা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ করার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। এছাড়া, পঞ্চগড় টার্মিনাল এলাকায় গড়ে ওঠা হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে আকস্মিক পুলিশি অভিযান পরিচালনাসহ এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.