শিখনমান মূল্যায়নে ষষ্ঠ শ্রেণির ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে একেবারেই দুর্বল। গণিত বিষয়ে সূচকে এগিয়ে আছে ছেলেরা। তবে ইংরেজিতে বেশি দুর্বল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বিভাগওয়ারি ফলে সেরা রাজশাহী, দুর্বল সূচকে সিলেট। দেশের মাধ্যমিক স্তরে (ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণি) বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখনমান মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে।
লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট অব সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশন (লাসি) ২০১৫ শীর্ষক এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন বিভাগ।
প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত ফলে দেখা যায়, ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখনমানের মূল্যায়ন ও ব্যক্তিগত দক্ষতায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রাজশাহী বিভাগ। সর্বনিম্নে সূচকে আছে সিলেট বিভাগ।
ইংরেজিতে দুর্বল ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা : ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলায় ৬ শতাংশ; ইংরেজিতে ২৯ শতাংশ, গণিতে ২৩ শতাংশ একেবারে দুর্বল। মোটামুটি দক্ষ বাংলায় ৩৬ শতাংশ, ইংরেজিতে ২০ শতাংশ এবং গণিতে ২৪ শতাংশ। কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে ভালো আছে বাংলায় ১০ শতাংশ, ইংরেজিতে ৫ শতাংশ এবং গণিতে ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলায় ১ শতাংশ; ইংরেজিতে ৯ শতাংশ, গণিতে ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী একেবারে দুর্বল। মোটামুটি দক্ষ বাংলায় ৩২ শতাংশ, ইংরেজিতে ৩০ শতাংশ এবং গণিতে ৩৫ শতাংশ। কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে ভালো আছে বাংলায় ২২ শতাংশ, ইংরেজিতে ৭ শতাংশ এবং গণিতে ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
গণিতে ছাত্ররা এগিয়ে : গড় মূল্যায়নে ছেলেমেয়ের সূচকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলায় ৭০ শতাংশ ছাত্রী এবং ৬৮ শতাংশ ছাত্র; ইংরেজিতে ৭১ শতাংশ ছাত্র এবং ছাত্রী। তবে এ মানে গণিতে ৮০ শতাংশ ছাত্র ও ৭৫ শতাংশ ছাত্রী। এ সূচকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলায় ছাত্র ৫৫ শতাংশ এবং ছাত্রী ৫৪ শতাংশ; ইংরেজিতে ৫০ শতাংশ ছাত্র এবং ৪৯ শতাংশ ছাত্রী; গণিতে ছাত্র ৬২ শতাংশ, ৫২ শতাংশ ছাত্রী।
অবস্থানগত সূচকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সাধারণ শিক্ষায় বাংলায় ৭১ শতাংশ ও মাদ্রাসায় ৬৩ শতাংশ; ইংরেজিতে সাধারণ শিক্ষায় ৭৩ শতাংশ এবং মাদ্রাসায় ৬৩ শতাংশ; গণিতে সাধারণ শিক্ষায় ৭৭ শতাংশ এবং মাদ্রাসায় ৭৬ শতাংশ। এই সূচকে অষ্টম শ্রেণির বাংলায় সাধারণ শিক্ষায় ৫৬ শতাংশ এবং মাদ্রাসায় ৪২ শতাংশ। ইংরেজিতে সাধারণ শিক্ষায় ৫১ শতাংশ; মাদ্রাসায় ৩৯ শতাংশ এবং গণিতে সাধারণ শিক্ষা এবং মাদ্রাসার উভয়ে ৫৭ শতাংশ।
দেশের ৫২৭টি স্কুল ও মাদ্রাসার মধ্যে শিক্ষার মানের প্রতিফলন ঘটে এই প্রতিবেদনে। এতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার খাদেমুল ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। সবচেয়ে দুর্বল বলে বিবেচিত হয়েছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে উত্তর কুশিয়ারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এই প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে এক কর্মশালায় শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেলা ১১টার পর বেশিরভাগ শিক ও শিার্থীকে পাওয়া যায় না। আবার শিকরা মনে করেন, কাসে পড়ালে কোচিং-প্রাইভেটে শিার্থীরা আসবে না। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
শিামন্ত্রী পরিদর্শনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, অনেক শিা প্রতিষ্ঠানপ্রধান জানেন ১০ বছরেও তার প্রতিষ্ঠানে কেউ পরিদর্শনে আসবে না। এ জন্য এসব সমস্যা হয়। নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, যাদের শিার মান খারাপ তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে শিার মান বৃদ্ধিতে কাজ করে যেতে হবে। যারা ভালো করেছে আগামীতেও তাদের সাফল্য বজায় রাখতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিার হার পরিমাণের দিক থেকে বেড়েছে, কিন্তু গুণগতমান সে অনুযায়ী বাড়েনি। সেজন্য গুণগতমানের দিকে জোর দিতে হবে। মাঠপর্যায়ের শিা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে কলেজ থেকে একজনও পাস করেনি, মাত্র একজন পরীা দিয়ে একজনই ফেল। তাহলে তারা (শিক্ষা কর্মকর্তারা) কী পরিদর্শন করেন।
প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, চলমান পরীক্ষা পদ্ধতি ও লার্নিং অ্যাসেসমেন্টের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা পদ্ধতির পাশাপাশি লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম চালু রয়েছে। কোনো কোনো দেশে কেবল লার্নিং অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমেই বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখনমানের মূল্যায়ন করে তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন করা হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.