পদ্মাই বাংলার প্রাণ, আবার পদ্মাকে ‘রাক্ষুসী’ বলেও অভিহিত করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়। তা ভাঙনের কারণে। হাজার বছর যার সঙ্গে বসবাসে মানুষ অভ্যস্ত, সেই নদীভাঙন জীবনকে কখনও স্তব্ধ করতে পারেনি। কিন্তু দেশের বাকি অংশ, বিশেষত পূর্বাঞ্চল ও রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় সড়কপথে যাতায়াতের জন্য পদ্মা পার হতেই হয়। যানবাহনের জন্য ফেরি অপরিহার্য, আর আছে লঞ্চ, নৌকা। পদ্মার পূর্ব ও পশ্চিম তীরে মোট চারটি ছোট অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর। সেখানে পদ্মার মেজাজ বিগড়ে গেলে মহাসংকটে পড়তে হয়। দেড় মাস ধরে কমবেশি দু’রকম সংকট চলছে। একদিকে বর্ষায় প্রবল স্রোত ও ভাঙনের জন্য ফেরি পারাপারের ঘাটগুলো ঠিক রাখা যাচ্ছে না; অন্যদিকে স্রোতে উজান থেকে আসা বালুর জন্য মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকায় কিছু অংশে চরের ভেতরের চ্যানেলে নাব্য কমে যাওয়ায় ফেরি চলতে পারছে না। কেউ বলছেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি সংকট। সাত দিন বন্ধ থাকার পর রো রো ফেরি চালু হয়েছে; কিন্তু চ্যানেল ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। সর্বশেষ খবরে পদ্মার মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটের অবস্থাই তুলনামূলক স্বাভাবিক। কিন্তু ওপারে রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ায় অবস্থা সঙ্গিন। চারটি ঘাটের মধ্যে কয়েক দিন মাত্র একটা চালু ছিল, গতকাল দুটি চালু হয়েছে। নাব্যের অভাবে মুন্সীগঞ্জ জেলার শিমুলিয়া এবং ওপারের মাদারীপুর জেলার কাওড়াকান্দির ফেরি চলাচল বিঘি্নত। জমেছে দীর্ঘ যানবাহনের সারি। আগামীকাল থেকেই ঈদের যাত্রী ও গরুবাহী ট্রাকের চাপ প্রবল হতে থাকবে। ট্রাকচালকরা যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুর চেয়ে ফেরি বেশি পছন্দ করেন কম দূরত্ব ও বিশ্রামের সুযোগের জন্য। ঈদের চলাচল ব্যবস্থা যাতে ভেঙে না পড়ে, বিপর্যয় সৃষ্টি না হয়, তার জন্য বিআইডবি্লউটিসি, ঘাট কর্তৃপক্ষ, ড্রেজিং কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন সবাইকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে ঘাটগুলোকে ঠিক করতে হবে, ঠিক রাখতে হবে। এ জন্য যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি আছে। এই সমস্যার জন্য প্রকৃতি ছাড়া অন্য কেউ দায়ী নয়। আমরা শুধু বলতে চাই, কোথাও যেন কোনো গাফিলতি না ঘটে। বাস্তব অবস্থা মেনে নিয়ে যাত্রীসাধারণকেও চলাচলের কর্মসূচি ঠিক করতে হবে, ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং অনিশ্চয়তা এড়াতে যাত্রার আগে ঘাটের পরিস্থিতির খবর নিতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনকেও নাগরিকদের সাহায্য করতে হবে। সবার ঈদ নির্বিঘ্ন হোক।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.