কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: বিয়ের উৎসবে মেতেছে প্রত্যন্ত পল্লীর একটি গ্রামের মানুষ। তবে এ উৎসব কোনো মানুষের বিয়েকে ঘিরে নয়। এটি অনাবৃষ্টির কারণে ব্যাঙের বিয়ে। আবহমানকাল থেকে গ্রামীণ জনপদে এ উৎসব চোখে পড়ে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব উৎসবে ভাটা পড়লেও দেশের অনেক প্রান্তে এমন দৃশ্য এখনও চোখে পড়ে। এমনি একটি বিয়ের উৎসবে মেতেছিল জেলার বিরল উপজেলার ভাণ্ডারা ইউনিয়নের বেতুরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মানুষ। উপজেলার বেতুরা পশ্চিমপাড়া গ্রামে শনিবার সকাল ১১টায় এ বিয়ের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান।। সবার বিশ্বাস, ব্যাঙের বিয়ে দিলেই অনাবৃষ্টি কেটে যাবে। বিয়েতে গ্রামবাসীসহ ৫০০ আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। রং মেখে নেচে-গেয়ে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি বজেন্দ্র বর্মণ জানান, আজ শ্রাবণ মাসের ২৪ দিন। কিন্তু বৃষ্টি নেই। জমিতে চাষ দেওয়া যাচ্ছে না। যে জমিগুলোতে চারা রোপণ করা হয়েছে, সে জমিগুলো পানির অবাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এ কারণে যাতে বৃষ্টি আসে সে জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়। গ্রামের যুবারা সাত দিন আগে থেকে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিচে-গেয়ে অর্থ, চাল, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, তেল সংগ্রহ করেন। এ সময় প্রতিটি বাড়িতে ব্যাঙের বিয়ে খেতে আসার দাওয়াত দেওয়া হয়। বেতুরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাঁশতলায় সাজানো মাড়োয়ায় সকাল থেকে গ্রামবাসী আসতে শুরু করেন। বাজানো হয় মাইক। রং ও কাদা মেখে শুরু হয় নাচ-গান। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় বর ব্যাংকুর মা লাইলী ও কনে মেনকার মা ডালো রানী রায় বর-কনেকে নিয়ে হাজির হন মাড়োয়ায়। এ সময় পাশেই চলছিল রান্না-বান্নার কাজ। শুরু হয় নাচ-গান। গ্রামের মানুষ বর-কনেকে দেখে টাকাসহ বিভিন্ন প্রকার উপহার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে যান। মাড়োয়ার আশপাশে চলে লাঙল দিয়ে জমি চাষ। শুকনার মধ্যে লাগানো হয় ধানের চারা। এ যেন এক অন্যরকম উৎসব। মুসলমান-হিন্দু সকল সম্প্রদায়ের সব বয়সের মানুষের মিলনমেলা। এ ব্যাপারে তেলিয়া বর্মণ (৮২) বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসী সবাই মিলে সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি। ভগবান অবশ্যই দেখছেন আমরা বৃষ্টির জন্য এ আয়োজন করেছি। অবশ্যই বৃষ্টি হবে।’ বিরল ভাণ্ডারা ইউপির ছাত্রলীগের আহবায়ক মহেশ চন্দ্র রায় জানান, সাত দিন ধরে এ আয়োজন চলছে। এলাকার যুবারা মূলত এ আয়োজন করেছে। বিকেলে গরুর গাড়িতে করে কনের বাসায় যাওয়া হবে কনেকে শ্বশুরবাড়িতে আনার জন্য।’ দিনাজপুরে এখন চলছে অনাবৃষ্টি। ক্ষেতে পানি না থাকায় কৃষকের মধ্যে শুরু হয়েছে হাহাকার। মানুষ বিকল্প ব্যবস্থায় সেচ দিয়ে আমন চারা রোপণ করছেন। জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে জমিতে আমন চারা পুড়ে যেতে শুরু করবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.