বাঙ্গালীর ভ্রমন
পেপের জীবনে এত চাঞ্চল্যকর মুহূর্ত খুব বেশি এসেছে বলে আমাদের জানা নেই। বেচারা থাকে বিদেশ বিভূঁই এ, দীর্ঘ এক বছর পর দেশে , আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সব মিলে একে বারে ডেকারস লেন এর ফিশ চপ এর মত কাড়াকাড়ি পরে গেছে। কি ভাগ্যিস প্লান করা ছিল বহু আগে থেকে!! নইলে ওকে নিয়ে এই সময় বেরোনো আর পাঁচ বছর এ PhD শেষ করা এক এ ব্যাপার!
সমস্যার সাতকাহন।
তবে সুধু পেপের কথা বলি কি ভাবে! অসুবিধা তো আমাদের কারোরই কম ছিল না । কারো সদ্য বিয়ে হয়েছে কেউ আবার বস এর ভয় এ জুজু কারোর আবার টাকা পয়সার টানাটানি কারো দিদি বাড়ি আসবে বহুদিন পর! এত কিছুর পর ও আমরা কজন যে কিভাবে দার্জিলিং মেল এর কামরা তে উঠে বসলাম সে নিয়ে আর একদিন লেখা যাবে। মোদ্দা কথা হল ছয়-মূর্তি চড়ে বসলাম ট্রেনে।
আমরা।
ট্রেন এ যখন চড়ে বসেই গেছি তখন আমাদের পরিচয় গুলো দেওয়া যাক। শ্রু , অর্ক , বোস , পেপে , নস্কর আর আমি অরি সবাই গবেষণা করি। বিজ্ঞান এর জ্ঞান কত বাড়ছে টা বলা শক্ত কিন্তু চোখ এর পাওয়ার , ওজন আর কুটকাচালি করার স্বভাব বাড়ছে তা বলাই বাহুল্য। আমরা থাকি কলকাতায় আর পেপে দলছুট হয়ে আমেরিকায় । দলে অবশ্য আরও অনেকে আছে কিন্তু এবারে বাকিদের আর আনা গেল না ।
যে কোন প্রোগ্রামে ই শ্রু এর বাড়ীর বানানো খাবার এর একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে। পেপের ঠাকুমার বানানো নাড়ু আর শ্রু এর আনা পারোটা-মুরগীর শ্রাদ্ধ করে ঘুম টুম নামক তুচ্ছ ব্যাপার চার দিনের জন্য তুলে রেখে আড্ডা সুরু হল। যদিও নানাবিধ কারণে আমাদের আবেগ নামক বিষম বস্তুটি একটু কম ই আছে তাও এতদিন পর পুরনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে সবাই ই কিছু অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ হচ্ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যাত্রাশুরু।
কুঁজোর ও যেমন চিত হয়ে শোয়ার ইচ্ছে হয় তেমন ই অনেক গবেষণারত ছাত্রছাত্রীর ই প্রেম করার ইচ্ছে হয় এবং অনেকে এ তা করে। তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য ভারতবর্ষ থেকে বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনার থেকে সামান্য ই বেশি কিন্তু আমরা তো Robert Bruce এর বংশধর তাই চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখি না। তো আমাদের অনেকেই চলন্ত ট্রেন কামরার নানাবিধ ‘নিরাপদ’ জায়গা দেখে প্রেমিকার সাথে কথা বলে দায়ীত্ব পালন করে মুক্ত হয়ে আড্ডায় যোগদান করল।
রাতে র বিশেষ ঘুম আসেনি তার কিছুটা কারন যদি দীর্ঘদিন জমে থাকা কথাগুলো হয় অন্য কারন অবশ্য চারিদিক থেকে ভেসে আসা নাসিকাগর্জন। নানা স্বরে ভেসে আসা সেই সব গর্জন এর বিধেয় কি ছিল জানা নেই কিন্তু উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল আমাদের জাগিয়ে রাখা।
কুয়াশার কারনে ঠিক সাতসকালে আমাদের নিউ-জলপাইগুডি পৌঁছান হল না।দেরি হল বেশ খানিকটা। গাড়ি ঠিক করা ছিল। জলখাবার রাস্তায় করব ঠিক করে নিয়ে সিলারিগাও এর পথে রওনা দিলাম। উত্তরবঙ্গ আমার কাছে নতুন না। তাও প্রতিবার এ পুরনো রাস্তায় নতুন জিনিষ ঠিক পেয়ে যাই। শহর এর ভিড় ছাড়িয়ে তিস্তার গা ঘেঁষতে ঘেঁষতে যাত্রা শুরু।
রাতে ঘুম হয়নি আমার আর শ্রু এর জ্বালায় তাই অর্ক ভেবেছিল রাস্তায় বোধহয় ওকে একটু ক্ষমা দেওয়া হবে, সেই উদ্দেশে চোখ এ ওর trademark রোদ-চসমা পরে কিঞ্ছিত দিবানিদ্রার আয়োজন করছিল কিন্তু এই trip এ সেটা না হতে দেয়ার দায়িত্য আমার আর শ্রু এর ছিল। পেপে বোস আর নস্কর ব্যাস্ত ছিল প্রকৃতি ক্যামেরা-বন্দী করতে আর আমরা দেখছিলাম বা বলা ভাল গিলছিলাম সৌন্দর্য। এই রাস্তা দিয়ে আগে দার্জিলিং গেছি বেশ কয়েকবার, আমি সেই অল্প জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম বেশ কয়েকবার!! কিন্তু কেউ শুনলে তো!!
তিস্তাপার দিয়ে যাওয়ার একটা মস্ত সমস্যা হল ধুলো। আর সাথে যদি কোন হাপানির রুগী থাকে তাহলে ই চিত্তির!! রাস্তা বড় আঁকাবাঁকা । কিন্তু কি আসামান্য দক্ষতায় পাহাড়ি ড্রাইভাররা গাড়ি চালান সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল।আমার খুব সন্দেহ হয় সমতলে সোজা রাস্তায় এরা কিভাবে চালাবে!!
নেপালি শিক্ষা ও অন্যান্য
আগেই বলেছি কাজের সুত্রে দার্জিলিং যেতে হয় মাঝে মাঝেই তাই বেশ কিছু নেপালি শব্দ রপ্ত করতে পেরেছিলাম । শুরুতেই বাকিদের বলে দিলাম দাজু মানে দাদা তাই সম্বোধন করতে গেলে সাথে একটা দাজু থাকাটা ঝালমুড়িতে লঙ্কা থাকার মত আবশ্যিক। নস্কর এর বিশেষ কিছু মুহূর্তে বিশেষ কিছু অসামান্য প্রশ্ন করার প্রতিভা আছে। ‘ আচ্ছা তাহলে বৌদি কে কি কাজু বলব ? ’
যাক তিস্তার পার দিয়ে খানিক বাদ পৌছালাম ছোট্ট একটা গ্রাম এ। মোমো আর কফি। জানলা বাইরে তিস্তা । দারুন সস্তা কমলালেবু । বোস এর DSLR এর সাথে পেপের আনা কিছু একটা জ্বালি ক্যামেরার তুলনা । শ্রুর জন্য লঙ্কার আচার কেনার প্ল্যান। রাস্তার জন্য কিছু রসদ নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়া।
কষ্ট না কেষ্ট
সিলারি পৌঁছাবার শেষ ৪-৫ কিমি রাস্তা খুবই বাজে। গাড়িতে বসে এর ওর গায়ে পড়া ছাড়া কোন কাজ থাকেনা ওই সময়। হাতে সময় থাকলে ওই রাস্তা টা হেটে আশাই ভালো। ওইটুকু রাস্তা কিছু না হলেও ৪৫ মিনিট সময় লাগল। আমাদের কোমর জবাব দিতে শুরু করে দিয়েছিল। সিলারি তে পৌঁছে অবশ্য মনে হয় এই কষ্টটা সার্থক।
ছোটবেলায় রংপেন্সিল পেয়ে সাদা পাতা দেখলেই একটা ছবি আমি আঁকতামই । পাহাড় তার গায়ে একটা গ্রাম। খুব রঙিন সবকিছু। সিলারি অনেকটা আমার সেই ছোট্টবেলার ছবিটার মতো। নিস্তরঙ্গ চুপচাপ একটা গ্রাম। অদ্ভুত ভাবেই মোবাইল এর টাওয়ার ছিল সবার।
ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত ডাল আলুভাজা র ডিম এর ঝাল। খিদের মুখে এতটা আশা করিনি আমরা। পেপের অবশ্য এত কিছুতে মন নেই ওর খানিক টা পেঁয়াজ হলেই হল। আমরা ভাত এর সাথে পেঁয়াজ খাই আর পেপে পেঁয়াজ এর সাথে ভাত! খুব তারাতারি খেয়েই আমরা বেরলাম।
রাজা তোর দুর্গ কোথায় ?
ঘণ্টাখানেক দূরে নাকি একটা দুর্গ আছে। সেই দুর্গের টোপ দেখিয়ে বোস আমাদের এমন এক জায়গায় নিয়ে গেল সেখানে লিখে না দিলে কেউ বুঝতে পারবে না ওখানে দুর্গ ছিল না হিটলার এর গোয়ালঘর! কিন্তু দুর্গ যাওয়া এবং আশার রাস্তা টা বড় সুন্দর। সত্যি কথা বলতে কি উত্তরবঙ্গ ও সিকিম এর বেশ কিছু জায়গায় আমি গেছি। সেই জায়গা গুলো কতটা সুন্দর তা তর্কযোগ্য কিন্তু যাওয়ার পথটা খুব সুন্দর। তাই জঙ্গল এর মধ্যে দিয়ে ঘণ্টাখানেক হাঁটতে মন্দ লাগলো না। আশ্চর্যজনকভাবে গোটা রাস্তায় পাখি বিশেষ দেখলাম না। রাস্তার আশেপাশে পড়ে থাকা সভ্যতার চিহ্ন সেই অনুপস্থিতির কারন বুঝিয়ে দিল।
চোখে ঘুম নেই।
রাতে ঘুমনোর কারন ছিল কিন্তু ইচ্ছে বা উপায় ছিল না। সামনে পাহাড়। একটা শহর । মিটমিটে আলো । কুয়াশা। সারারাত বসা যায়। ৩০০ টাকা পেলে কাম্প-ফায়ার করে দেবে । একথা শুনে অন্য একদল ভ্রমনার্থি আগুন জালিয়ে নাচ-গান শুরু করে। রাতে খাওয়ার পরে সেই পড়ে থাকা আগুন আবার খানিক জ্বালিয়ে আমাদের বিনেপয়সার সুখ। ভোরে রামিথে বলে এক জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। ঘুম হল না।সারারাত আড্ডা। ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে গেছিল। অ্যালার্ম এর শব্দে বুঝলাম এই যাত্রার সব থেকে ঘটনাবহুল দিনটা চলে এসেছে।
এবং তিস্তা।
অন্ধকার থাকতে থাকতে আমরা বেরিয়ে পরলাম সূর্যোদয় দেখতে। এক পাহাড়ি কুকুর আমাদের পাণ্ডব ভেবে পিছু নিল। প্রায় ঘণ্টা খানেক হাতড়ে হাতড়ে যাওয়ার পর রামিথে। গতকাল দুর্গ দেখার পর রামিথে নিয়ে যে আশঙ্কা আমাদের হয়েছিল তা পুরোপুরি কেটে গেল। অপরুপা তিস্তা। কুয়াশার জন্যে সূর্যোদয় দেখা হল না বটে কিন্তু যা দেখলাম তা ‘জন্ম জন্মান্তর এও ভুলিব না’ । তিস্তার বাঁক গুলো যেন তুলিতে আঁকা। সামনের উপত্যকাতে টিমটিম করে জ্বলা নানা রঙের আলো। শিরশিরে ঠাণ্ডা বাতাস কুয়াশা আর তিস্তা, আমাদের বাধ্য করল বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতে। বিস্কিট দিয়ে প্রাতরাশ করে আরও আধ ঘণ্টা পর যখন আমারা বেরোলাম রামিথে আমাদের মন জয় করে নিয়েছে।
এগারো ঘণ্টা ষাট মিনিট।
এর পরবর্তী বারো ঘণ্টা আমাদের সবার জীবনেরই খুব স্মরণীয় সময়। সাতটার মধ্যে শুরু করে রংলি পৌছালাম দশটায়। মোমো দিয়ে প্রাতরাশ সারতে সারতে খবর পেলাম প্রবল তুষারপাত এর জন্যে জুলুক এর ওপরে আর যাওয়া যাবে না। যথারীতি এক প্রস্থ ছবি তোলা হল। অদ্ভুত ভাবে রোদ্দুর মাখা ছিল দিনটা। আমরা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না য আর ৪০ কিমি দূরে কোন জায়গায় কি করে এত বরফ পরতে পারে যে রাস্তা বন্ধ! এরপরের রাস্তাটা সেই বিখ্যাত zikzac road. আমাদের মধ্যে অর্ক বেশ ভয় পেয়েছিল। ওর সেই রোদ-চসমা পরে চোখ বন্ধ করার তালে ছিল। কিন্তু সেটা করতে দিলে তো! ওহ বলা ভালো সিলারি থেকে ই আমাদের রবিন দাজুর সাথে এক বন্ধু ও ছিল গাড়িতে। গোটা সময় এ ধূমপান ছাড়া তাকে আর কিছু করতে দেখিনি তাই টার নাম আমরা অ্যাপেন্ডিক্স দিয়েছিলাম। যাওয়ার পথ এ আমি টার সাথে গাড়ির পেছনে বসেছিলাম।
কালো বরফ ও ইয়েতি
কাহাতক আর চুপচাপ প্রকৃতি দেখা যায়, আমি অ্যাপেন্ডিক্স এর সাথে ভাব জমাবার চেষ্টা করলাম। কাজ করি আবহাওয়া নিয়ে তাই ভাবলাম দেখি এদের গ্রাম এ অদ্ভুত কোন কিছু হয় কিনা। বললাম ‘ দাজু আপকা ঘার মেইন কালা বারাফ গিরতা হায় ’ , বেটা প্রথম এ একটু হাসল তারপর কি জানি মনে করে বলল না, আমি বেকুব এর মতো তাকিয়ে আছি দেখে খানিক বাদে নিজেই বলল ও যেখানে থাকে সেখানে বরফ ই পড়ে না।
গোটা রাস্তায় নস্কর একটা ধুমস মোটা কম্বলের মত কি একটা গায়ে দিয়েছিল, সেটার রং ছিল সাদা। তাই ওকে আমরা ইয়েতি বলে ডাকছিলাম। তাতে যে ও খুব খুসি ছিল না সেটা সময় সময় আমার বা শ্রুর মাথায় গাঁট্টা মেরে বোঝানর চেষ্টা করছিল।
আর্জেন্টিনার দেশে!!
কিছু পর যেখানে এলাম সেখান থেকে মেঘ পায়ের তলায় আর আকাশ নীল। জুলুক পেরিয়ে ঘণ্টাখানেক পর প্রথম বরফ দেখলাম আমরা। রাস্তায়। আমার মত যারা আগে বরফ দেখেনি তাদের কাছে এটা যে কি আসামান্য অভিজ্ঞতা তা বলে বোঝানো যাবে না। নীল আকাশ সাদা মেঘ আর পায়ের তলায় বরফ। কি দারুন!! নাথাং ভ্যালী বলে একটা জায়গায় বরফ নিয়ে খানিক হুটোপুটি করার পর গরম গরম কফি আমাদের চাঙ্গা করে দিল। একটা গুমটি ঘর । দুই মহিলা। বছরে ছয় মাস বরফে স্বেচ্ছা-নির্বাসন । কোন যুদ্ধের থেকে কম না সেটা। আমার জুতোয় বরফ ঢুকে বেশ ঠাণ্ডা লাগছিলো। মোজা খুলে টিস্যু পেপার দিতে খানিকটা ঠিক হল।
ড্রাইভার এর গোঁসা।
যদিও অনুমতি ছিল না তাও এতদুর আশার পর আর একটু যাওয়ার ইচ্ছে কার না হয়! রবিন দাজুকে খানিকক্ষণ বোঝাবার বৃথা চেষ্টা করে আমরা ঠিক করলাম অন্তত বরফ এর ওপর দিয়ে ঘন্টাখানেক হাটব আমরা। সেই কথা দাজু কে বলাতে দেখি তার রাগ হয়েছে। খানিক ভেবে বলল সে নিয়ে যাবে কিন্তু কিছু হলে দায় আমাদের। এই কিছু হওয়াটা অনেক কিছু। তার মধ্যে পুলিশ বা মিলিটারির হাতে ধরা অথবা বরফ এ গাড়ির চাকা পিছলে সটান খাদ এ পড়াও আছে। যাক যা থাকে কপালে ভেবে সোজা পাড়ি দিলাম আমরা। আরও ঘণ্টাখানেক বরফ এর ওপর দিয়ে পাক খেতে খেতে বাবামন্দির পৌছালাম। সাদা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ছে না এবার। ঈগল বাঙ্কার দেখলাম রাস্তায়। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির বড় প্রিয় দেশের করা ‘ভালবাসার’ চিহ্ন।
ভুত!!
বাবামন্দিরের ভুত এর গল্পটা বেশ বিখ্যাত। তাই সেই গল্প বলে আর সময় নষ্ট করব না। বাবামন্দিরে জুতো পরা মানা। খালি পায় অবশ্য যেতে হবে না।তার জন্য সারিসারি চপ্পল রাখা। কিন্তু এই ঠাণ্ডায় ওই চপ্পল পরে হাটাও কি মুখের কথা নাকি। সত্যি কথা বলতে বাবামন্দির দেখে আমরা হতাশই হয়েছিলাম। এত সুন্দর প্রকৃতির মাঝে কিছুটা বেমানান ই বলা যায়। সেনাবাহিনির জওয়ানরা একে বারেই ‘ঘোড়া-প্রিয়’ না। বেশ হাসি খুসিই।
দর-দাম।
এই অব্দি এসে রবিন দাজু আর কিছুতেই এগবে না। তার দাবি এর পর যদি কেউ গাড়ি আটকায় তাহলে তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এত দূর এসে কুপুপ না দেখে চলে যাব!! এক স্থানীয় গাড়িচালক এই অবস্থায় এসে উপস্থিত। সাথে সেনাবাহিনির হোমরা-চোমরা আর এক জন। ফেল কড়ি মাখ তেল। আমাদের মধ্যে শ্রু আর নস্কর দরদাম করে ১০০০ টাকার বিনিময়ে কুপুপ অব্দি যেতে রাজি করিয়ে দিল। রাস্তায় বরফ সরাবার কোদাল নিয়ে রওনা দিলাম আমরা।
হাতি।
এই রাস্তাটা আরও নির্জন কোন মানুষ বা গাড়ি নেই। পাহাড়ের ওপরে চৈনিক বাঙ্কার। এক জায়গায় লেখা ‘ আপনি চৈনিক সেনার দৃষ্টিসীমার মধ্যে আছেন’ । মাঝে মাঝেই হওয়া গুলি বিনিময় নিছক ই গল্প-কথা নয় তাও দেখলাম। ভয় করার কথা কিন্তু মন ভালো করা এত দৃশ্য চারপাশে যে ভয়টা গৌণ হয়ে যায়। মিনিট পনের পরই আমরা এই পথের শেষ বিন্দু তে চলে এলাম। হাতি-লেক। কুপুপ এর এই হাতি লেক কিছুটা জমে আছে। আর আমরা গাড়ি থেকে নেমে প্রায় পুরোটাই!!
একসাথে ছবি তোলা বা চৈনিক বাঙ্কার দেখতে দেখতে একটা জিনিষ বড় বেশি মনে হতে লাগল যে চার মাস আগে থেকে করা এই আয়োজন শেষ হয়ে গেল!! ফেরার সময় তাই সবাই বোধহয় একটু বেশিই চুপ করেছিল। শেষবারের মত ক্যামেরা না, চোখ দিয়ে প্রকৃতির রুপ-রস-গন্ধ সব নিয়ে নিচ্ছিলাম।
ফেরা।
কুপুপ থেকে ফিরে জুলুখ পৌছাতে পৌছাতে শেষ বিকেল হয়ে গেল। যদিও আমাদের জন্যে ধোঁয়া ওঠা ভাত ঠিক ই রাখা ছিল। গরম জলে স্নান করে তাজা হয়ে আড্ডা চলল সারারাত ধরে। সকাল সকাল উঠে ম্যাগি খেয়ে সোজা গাড়ি। রাস্তায় মোমো দিয়ে লাঞ্চ করে নিচে নামতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। পেপে থেকে গেল। ও আসাম যাবে। আর আমরা বাড়ি। আবার আলাদা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.