সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর নেই। গতকাল বিকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। সাহিত্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে এ কীর্তিমানের ছিল নিবিড় যোগাযোগ। তার লেখা ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরুলদিনের সারা জীবন’, ‘ঈর্ষা’সহ বিখ্যাত কয়েকটি মঞ্চনাটক আমাদের নাট্যাঙ্গনকে করেছে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি। এছাড়া তার লেখা ‘নিষিদ্ধ লোবান’ নিয়ে তৈরি হয়েছে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’। তার মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি, সিডাব, বাচসাসসহ বিভিন্ন সংগঠন তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট কয়েকজনও প্রকাশ করেছেন গভীর শোক। সেসব নিয়েই সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন। গ্রন্থনায় বিনোদন ডেস্ক রাজ্জাক সৈয়দ শামসুল হকের ইন্তেকালের খবরটা একটু আগে শুনলাম। শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিনি আমাদের দেশের অন্যতম গুণী একজন লেখক ছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে তার অবদান ছিল অনেক। তার জায়গা পূরণ করার মতো লেখক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তার শূন্যতা বাঙালি হৃদয়কে অনেকদিন কাঁদাবে। কবরী কয়েক দিন আগের কথা। কবিপত্নী আনোয়ারা সৈয়দ হক ইউনাইটেড হাসপাতালের কেবিনের বাইরে এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে যান। পরিবারের লোকজন ছাড়াও সে সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললেন। বললেন এখন অনেকটা সুস্থ আছেন। এভাবে আমাদের ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ভাবিনি। আমার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমে। ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক ভাই। ওই ছবিতে হক ভাইয়ের লেখা কয়েকটি গানও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এখনও মানুষ সেই গানগুলো মনে রেখেছে। অনেক প্রতিভাবান একজন মানুষকে হারালাম আমরা। মুস্তাফা জামান আব্বাসী সৈয়দ শামসুল হক যে কত বড়মাপের লেখক ছিলেন সেটা বলে শেষ করা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন তিনি। সব সময় হাস্যোজ্জ্বল ও সদালাপী একজন মানুষ। খুব সরলতা খেলা করতো তার মাঝে। তিনি চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। এ ক্ষতি কখনো পূরণ হবে না। মন থেকে দোয়া করি যেন আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করেন। রোজিনা আমি অনেক বই পড়তে পছন্দ করি। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা উপন্যাস ছিল আমার অনেক পছন্দের। ‘একদা এক রাজা’, ‘বিরতিহীন উৎসব’, ‘অপর পুরুষ’- এই উপন্যাসগুলো যে কতবার পড়েছি তা নিজেও জানি না। এখনও অবসর পেলে তার লেখা উপন্যাস ও কবিতার বই পড়তে বসি। তার লেখনীর ধরন ছিল আমার দারুণ পছন্দের। তার মৃত্যুর খবর মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুক। ফারুক কয়েক দিন আগেই জানলাম তার অসুস্থতার কথা। কিন্তু তিনি এত দ্রুত আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ভাবিনি। ‘ম্যাকবেথ’, ‘টেম্পেস্ট’-এর মতো বিখ্যাত গ্রন্থ তিনি অনুবাদ করেছিলেন। অত্যন্ত ভদ্র, মেধাবী ও ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। নাটক ও চলচ্চিত্রে তার অবদানের কথা আমরা কখনো ভুলতে পারবো না। শাইখ সিরাজ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে আর সিঙ্গাপুরে নেয়া গেল না। তিনি তার আগেই আমাদের সবাইকে রেখে পরপারে চলে গেলেন। গতকাল সন্ধ্যায় তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। খুব খারাপ লাগছে খবরটি শুনে। লেখক হিসেবে তিনি কতটা বড়মাপের ছিলেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। যে কাউকে খুব আপন করে নিতেন। যাই হোক, এখন তো দোয়া ছাড়া কিছু করার নেই। দোয়া করি তিনি যেন জান্নাতবাসী হোন। ফকির আলমগীর সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক মানেই বাংলাদেশ। তার লেখার ভক্ত নন, এমন মানুষ খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে। অনেক দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু তার সুস্থ হয়ে ওঠার একটা আশা ছিল। তার মৃত্যুর খবর শোনামাত্র মনটা এত খারাপ হয়ে গেলে বোঝাতে পারবো না। তার মৃত্যুকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকল শাখা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি কখনও পূরণ হবার নয়। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। এন্ড্রু কিশোর হক ভাইয়ের এই চলে যাওয়া একদমই মেনে নিতে পারছি না। তার মতো এত ভালো মনের মানুষ আমি আমার জীবনে কমই দেখেছি। মাত্র কদিন আগেই তিনি আমাকে তার লেখা চারটি গান উপহার দেন। এ গানগুলো আমার জীবনের সেরা উপহার। অসুস্থ হক ভাইকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখনই ইশারায় ডাকলেন আমাকে তিনি। তার অনুরোধে দুটি গানও গেয়ে শোনাই আমি। এরপর বিদায় নেয়ার সময় তিনি আমাকে চারটি গান দিলেন। এ গানগুলো হাসপাতালে বসেই লিখেছিলেন তিনি। বললেন এ গানগুলো আলম (আলম খান) ভাইকে দিয়ে সুর করাতে। তিনি আজ চলে গেলেন। খুব কষ্ট হচ্ছে। যেখানেই তিনি থাকবেন নিশ্চয়ই ভালো থাকবেন। মৌসুমী সৈয়দ শামসুল হকের মতো মানুষ বারবার জন্মগ্রহণ করবেন না। সংস্কৃতি অঙ্গনে শুধু না, শিল্প সাহিত্যের সব শাখায় ছিল তার অবদান। আমরা খুব দ্রুত এই গুণী মানুষটাকে হারিয়ে ফেললাম। ফেরদৌস ২০১১ সালে ‘গেরিলা’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটি হাতে আসার পরপরই তার কথা মনে হয়েছিল খুউব। কারণ তার লেখা গল্প নিয়েই ‘গেরিলা’ তৈরি হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক অনেক মেধাবী একজন লেখক ছিলেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক ও চলচ্চিত্রে তার লেখনী ছিল প্রশংসনীয়। তার লেখা ‘রক্তগোলাপ’, ‘আনন্দের মৃত্যু’, ‘শীত বিকেল’ ছোট গল্পগুলো আমার খুব প্রিয় ছিল। জয়া আহসান ‘গেরিলা’ ছবিতে কাজ করার সময় মনে হয়েছে তিনি কত বড়মাপের লেখক ছিলেন। এ ছবিতে আমার চরিত্রের নাম ছিল বিলকিস বানু। নাসির উদ্দীন ইউসুফ ভাইয়ের পরিচালনায় এবং সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ‘গেরিলা’ ছবিটি সর্বস্তরে জনপ্রিয়তা পায়। তিনি অনেক গুণী একজন মানুষ। তার লেখনী মানুষ যুগ যুগ মনে রাখবে। তাকে আমরা খুব দ্রুত হারিয়ে ফেললাম।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.