ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তায় ভরপুর। সরকারি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও ৯ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা প্রতাপের সঙ্গে টিকে আছেন দুই সিটি কর্পোরেশনে। তাদের দাপটে অন্যরা থরহরিকম্প। শুধু তাই নয়, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এদের সাতজনকেই দেয়া হয়েছে পদোন্নতি। এরপর একজনকে দেয়া হয়েছে তিনটি মেগা প্রকল্পের দায়িত্ব। বাকিরাও পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন (কেইস), বুড়িগঙ্গা পাড় উন্নয়ন প্রকল্প, সানমুন স্টার টাওয়ার প্রকল্পে পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এক চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীকে
এছাড়া মতিঝিলে বঙ্গভবনসংলগ্ন বহুতল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে ১৫ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি। এদের মধ্যে ছয়জন বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত ও তিনজন উত্তর সিটি কর্পোরেশনে। এরাই পদোন্নতির মাধ্যমে পুরস্কৃত হয়েছেন। তদন্তে তাদের দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেছেন, ওই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সম্প্রতি নিজস্ব একটি তদন্ত কমটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বস্তুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তৈরি হচ্ছে হতাশা। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নগরবাসীর সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বঙ্গভবন সংলগ্ন ২৩ তলা কার পার্কিং ভবনের জায়গায় ৩০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নীতিমালা ভেঙে বঙ্গভবনের ২০ গজের ব্যবধানে নির্মিত এ ভবন রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সানমুন স্টার টাওয়ার নামের এই ভবনকে ঘিরে দুর্নীতি হয়। এতে সিটি কর্পোরেশনের ১৫ অসাধু কর্মকর্তা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনিয়মের সুযোগ করে দেন। সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর দুই সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয় এলজিআরডি মন্ত্রণালয়। দুর্ভাগ্যজনক, দীর্ঘ নয় মাস পার হলেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপরন্তু তাদের পদোন্নতি দিয়ে দুই সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।
এসব ঘটনায় বর্তমান দুই সিটি কর্পোরেশন ইমেজ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, দুই সংস্থায় প্রেষণে নিয়োজিত কয়েকজন কর্মকর্তা দুই মেয়রকে ভুল বুঝিয়ে দুর্নীতিবাজদের রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর নেপথ্যে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে। এসব বিবেচনায় দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করে কর্পোরেশনের কোনো লাভ নেই। বরং দুই মেয়রের উচিত কঠোর হাতে কর্পোরেশনের শৃংখলা ফিরিয়ে আনা। কোনো অবস্থায় দুর্নীতিবাজদের ক্ষমার সুযোগ নেই। যত দ্রুত তারা এ কাজটি করবেন, নগরবাসী তথা দেশবাসীর ততই মঙ্গল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.