প্রযুক্তিনির্ভর জাতীয় পরিচয়পত্র ‘স্মার্টকার্ড’ এর উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল। তার পরের দিন থেকেই শুরু হবে বিতরণ কার্যক্রম। ফ্রান্সের একটি সংস্থার সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, ৪০০ দিনে মোট ৯ কোটি ভোটারের হাতে তুলে দেয়া হবে উন্নতমানের এই কার্ড। কিন্তু বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১০ কোটি। তাহলে বাকি এক কোটি নাগরিকের হাতে কবে আসবে স্মার্টকার্ড? আর এ এক কোটি ভোটার কারা? এ নিয়ে ভোটারদের মনে তৈরি হয়েছে সংশয়। ইসি কর্মকর্তারাও জটিলতায় পড়েছেন এই হিসাব নিয়ে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের সব ভোটারের হাতেই তুলে দেয়া হবে স্মার্টকার্ড। এক্ষেত্রে বাকি থাকা এক কোটি ভোটারের জন্য নতুন করে চুক্তি করা হবে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য ফ্রান্সের কোম্পানি ওবারথু টেকনোলজির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দেড় বছরের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। চুক্তির সময় অতিবাহিত হলেও শুরু হয়নি স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম। পরবর্তীতে চুক্তির মেয়াদ আরো দেড় বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গড়ায়। তবে খরচের পরিমাণ রাখা হয়েছে একই। এমনকি সংশোধিত চুক্তিতে ভোটার সংখ্যাও ওই ৯ কোটিই রাখা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে সাম্প্রতিক হালনাগাদে ভোটার বেড়েছে আরো ১ কোটি। এদিকে সারাদেশে এক কোটিরও বেশি ভোটারের হাতে এখনো পৌঁছায়নি লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র। জানা গেছে, ২০১৪ সালে ভোটার হয়েছেন, কিন্তু এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, এমন নাগরিকের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। ইসি বলছে, এক্ষেত্রে হালনাগাদের সময় পাওয়া স্লিপ জমা দিয়েই স্মার্টকার্ড গ্রহণ করতে পারবেন তারা। কিন্তু প্রথমে চুক্তিতে তালিকায় না থাকা ওই এক কোটি ভোটার কারা, তার সঠিক উত্তর মিলছে না ইসি কর্মকর্তাদের কাছে। ঢাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলম মানবজমিনকে জানান, ২০১৪ সালের পরে ভোটার হয়েছেন, এমন নাগরিকরা আপাতত স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না। পর্যায়ক্রমে তারা পরবর্তীতে পাবে। এর আওতায় থাকবে ঢাকা সিটিও। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র অনুঃবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালের হালনাগাদ যারা ভোটার হয়েছেন, সেসব নাগরিকও স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন প্রথম পর্যায়ে। যদিও সংশোধিত চুক্তিতে যেই ৯ কোটি ভোটারের হিসাব ধরা হয়েছিল, সেখানে ঢাকার নতুন ভোটার সংখ্যা উল্লেখ ছিল না। তাহলে ঢাকার এই ভোটারদের জায়গায় বাদ পড়ছে কারা? এমন প্রশ্নও রয়েছে ভোটারদের মনে। অবশ্য এসব জটিলতার সমাধান দেন জাতীয় পারিচয়পত্র অনুঃবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, বাকি এক কোটি ভোটারের জন্য নতুন করে চুক্তি করবে নির্বাচন কমিশন। এই চুক্তির জন্য প্রাথমিক কাজও এগিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্মার্টকার্ড পাওয়া থেকে একজন ভোটারও বাদ পড়বে না। এবং ২০১৭ সালের মধ্যেই সবাই তথা ১০ কোটি ভোটারই স্মার্টকার্ড হাতে পাবেন। সুতরাং এটা নিয়ে কারো দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। মহাপরিচালকের বক্তব্যের সূত্র ধরে জানা গেছে, এক কোটি ভোটারের স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য খুব শিগগির ফ্রান্সের ওই সংস্থার সঙ্গে আরেকটি চুক্তি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে বাকি থাকা ভোটাররা ঢাকা সিটির মতোই অন্যান্য সিটি ও উপজেলার নাগরিকদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে স্মার্টকার্ড হাতে পেয়ে যাবেন। এমন পরিকল্পনা নিয়ে চুক্তির খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয়ও আরো বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে ইসি সূত্রে। এদিকে আগামীকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘স্মার্টকার্ড’ এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজনৈতিক, সুশীল সমাজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের। এর পরের দিন তথা ৩রা অক্টোবর থেকে ঢাকা এবং কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা থেকে একযোগে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। জানা গেছে, কুড়িগ্রামে বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শনে যাবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.