সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে শিশুটির জন্ম। জন্মের দুই ঘণ্টা পর মৃত্যুসনদসহ শিশুটিকে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে নেওয়া হয় মায়ের কেবিনে। পরে মা মোড়ানো কাপড় খুলে দেখেন শিশুটি নড়াচড়া করছে। জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা করার এ ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি হাসপাতাল সেন্টার ফর স্পেশালাইজড কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চে (সিএসসিআর)। শিশুটিকে এখন নগরের আরেকটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশুটির মা রিদোয়ানা কাউসার বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন। আর বাবা নুরুল আজম কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা। এটি তাঁদের প্রথম সন্তান। সম্প্রতি ফরিদপুরেও এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটে। সেখানকার একটি হাসপাতালে জন্মের পর একটি শিশুকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দাফন করার সময় শিশুটি কেঁদে ওঠে। পরে অবশ্য শিশুটি মারা যায়। জন্মের চার দিনের মাথায় ঢাকার একটি হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন চিকিৎসকেরা। মর্গে নেওয়ার জন্য ট্রলিতে ওঠানোমাত্রই নড়েচড়ে উঠেছিলেন ওই নারী। রিদোয়ানা কাউসার জানান, সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাঁর কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। এরপর প্রসূতি বিশেষজ্ঞ শাহানা আক্তারের পরামর্শে তাঁর সন্তানকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘রাত তিনটার দিকে মৃত উল্লেখ করে আমার সন্তানকে কেবিনে নিয়ে এল তারা। এ সময় আমি বাচ্চাটির মুখ দেখতে চাইলাম। কিন্তু তারা বাধা দিচ্ছিল। আমি জোর করে মোড়ানো কাপড়টি খুললাম। দেখি বাচ্চা নড়াচড়া করছে। তবে গায়ের তাপমাত্রা কমে যায় ও রং কালো হয়ে যায়।’ রিদোয়ানা কাউসার আরও বলেন, ‘আমি আবার এনআইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দিলেও হাসপাতালের লোকজন অস্বীকৃতি জানান। তাঁরা তখন বলেন, বাচ্চার মাংস নড়াচড়া করছে। বাচ্চা বেঁচে নেই। তখন আমি বাচ্চাকে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে ম্যাক্স হাসপাতালে নিই।’ রিদোয়ানা বলেন, ‘হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ভালো ছিল। অনেক কেয়ার নিয়েছে আমার। দু-একজনের ব্যক্তিগত ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।’ যাঁদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের শাস্তি দাবি করেন তিনি। ২৭ সপ্তাহে জন্ম নেওয়া শিশুটি বর্তমানে ম্যাক্স হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন। নবজাতকটির ওজন ৫০০ গ্রাম। ম্যাক্স হাসপাতালের এনআইসিইউতে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহীন আক্তার গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাচ্চাটির ওজন কম। প্রিম্যাচিউর। অবস্থা ততটা ভালো নয়।’ সিএসসিআরে নবজাতকের মৃত্যুসনদে সই করেছেন রুমা নামের কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক। সনদে মৃত্যুর কারণের জায়গায় লেখা হয়েছে, প্রিম্যাচিউর বেবি (অপরিপক্ব শিশু)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এনআইসিইউর চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ডা. রুমা সনদে সই করেছেন। সিএসসিআরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল আহমেদ বলেন, ‘কেন কী কারণে মৃত্যুসনদ দেওয়া হলো, সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি। মৃত্যুসনদ দেওয়ার আগে কনসালট্যান্টের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখবে আমাদের এক সদস্যের তদন্ত কমিটি। কার ভুলে এমন হলো তা বের করে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, কমিটি ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলবে।