জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সিলেটের কলেজ ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট থেকে ঢাকায় আনার পর অস্ত্রোপচার করা হলেও আশাবাদী হতে পারছেন না চিকিৎসকরা। সিলেট এমসি কলেজের এই ছাত্রী এক ছাত্রলীগ নেতার চাপাতির আঘাতের শিকার হয়েছেন। সিলেটের এই ঘটনার পর সারা দেশে ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। সিলেট এমসি কলেজে আজ তৃতীয় দিনের মতো পালিত হচ্ছে বিক্ষোভ কর্মসূচি। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রলীগ নেতা বদরুলকে ঘটনাস্থল থেকে জনতা আটক করে পুলিশে দিয়েছে। পুলিশ পাহারায় তাঁর চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।
এক ছাত্রলীগ নেতার এই অনৈতিক কর্ম আবারও ছাত্রলীগকে সমালোচনার মুখোমুখি করল। এমনিতেই ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সাধারণের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক ভাবনা রয়েছে। ছাত্ররাজনীতির সোনালি দিনগুলো এখন কেবলই স্মৃতি। আগের দিনের ছাত্রনেতাদের সম্মানের চোখে দেখা হতো। তাঁদের হাতেই রচিত হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও ছাত্রনেতারা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রলীগের ভূমিকাও খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আজকের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বড় বড় নেতা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দেশের ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রলীগের সেই সোনালি অধ্যায়কে কালিমায় ঢেকে দিতে বদরুলের মতো ছাত্রনেতারাই যথেষ্ট। বলা হতে পারে, সিলেটের বদরুলই ছাত্রলীগের পরিচয় বহন করে না। কথা সত্য। তবে এটাও তো মানতে হবে, ছাত্রলীগে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েই বদরুলরা এভাবে নিজেদের সর্বেসর্বা ভাবতে শুরু করে। সেভাবেই আচরণ করে। একশ্রেণির নেতাও যে বদরুলদের মতো দুষ্টগ্রহদের আশ্রয় দেন না, তা নয়। এভাবেই রাজনীতিতে দুষ্টক্ষতের সৃষ্টি হয়। রাজনীতির প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় আছে। আমরা পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মনে করতে পারি। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধের মধ্যে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালে সেই হত্যা মামলার রায় হয়। আটজনকে ফাঁসি ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। দণ্ডাদেশ পাওয়া ২১ জনের সবাই ছিলেন ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিরোধী দলের অবরোধের মধ্যে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনে অভিযুক্ত সবাই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী হওয়ায় সাধারণের মনে ধারণা জন্মেছিল, বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘ হবে। হয়তো কোনো গুরুদণ্ড হবে না। কিন্তু সাধারণের ধারণা পাল্টে যায় দ্রুত বিচারে।
খাদিজা বেগম নার্গিসকে কুপিয়ে জখম করেছেন যে ছাত্রলীগ নেতা, আমরা তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। দ্রুত বিচার করে তাঁর সর্বোচ্চ দণ্ড কার্যকর করে আবারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। ঘাতকের পরিচয় কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী নয়, ঘাতক। রাজনৈতিক পরিচয় যেন তাঁকে দণ্ড থেকে রেহাই না দেয়—সে প্রত্যাশা আমাদের।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.