লন্ডনে প্রবাসীদের ভালোবাসায় সিক্ত মতিউর রহমান চৌধুরী
লন্ডনে প্রবাসীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক, প্রখ্যাত সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ওয়াটারলিলি ব্যানকুয়েটিং হলে গ্রেটার লন্ডন নবীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন মতিউর রহমান চৌধুরী ও তাঁর সহধর্মিণী খ্যাতিমান সংবাদ উপস্থাপিকা, মানবজমিন সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরীর সম্মানে আয়োজন করে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি পরিণত হয়েছিল এক আনন্দঘন মিলনমেলায়। বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে একত্রিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে প্রবাসীরা তুলে ধরেছেন তাদের নিজ এলাকা নিয়ে স্বপ্ন ও সম্ভাবনার কথা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মতিউর রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত হবিগঞ্জবাসীর নিখাদ ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ ও অভিভূত। আমার এলাকাবাসী আমাকে এত ভালোবাসেন তা আগে জানা ছিল না। আজকের এ আয়োজন আমাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি প্রবাসীদের যে দেশে বসবাস করেন সে দেশের রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের রাজনীতি করে কোনো লাভ নেই। যারা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন তারা যদি সেসব দেশের রাজনীতি করেন তাহলে নিজেরা যেমন সফল হবেন তেমনি দেশের জন্যও সম্মান কুড়িয়ে আনতে পারবেন। তাছাড়া যে দেশে আছেন সেই দেশে নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও সোচ্চার ভূমিকা রাখতে পারবেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একজন বাসচালকের সন্তান লন্ডনের মতো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি নগরীর মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে আপনারা কেন পারবেন না। আপনারা প্রত্যেকেই কাউন্সিলর, এমপি, মেয়র হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। সেই যোগ্যতা এখানকার রাজনীতির মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশের রাজনীতি পরিচ্ছন্ন। লেগে থাকলে মন্ত্রী নির্বাচিত হওয়াও খুব কঠিন বিষয় নয়। বৃটেনের এখানকার রাজনীতি করে যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তাদের আমি স্যালুট করি। তিনি বাংলাদেশ নাগরিকত্ব খসড়া আইন প্রসঙ্গে বলেন, এই আইন পাস হলে প্রবাসীদের দেশে কোনো অধিকার থাকবে না। তাই আইনটি যাতে পাস না হতে পারে এজন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি তার সাংবাদিকতা জীবনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমার জীবনে কম্প্রোমাইজ শব্দটি কখনও মেনে চলিনি। কম্প্রোমাইজ করিনি বলে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়েছি। আপনারাও কম্প্রোমাইজ করবেন না। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া কোনো দিনও কোনো দাবি বাস্তবায়ন হয় না। মতিউর রহমান চৌধুরী নবীগঞ্জের প্রবাসীদের নিজেদের এলাকায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা অনুৎপাদনশীল খাতে কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করছেন। এতে এলাকাবাসী উপকৃত হচ্ছেন না। কমিউনিটি সেন্টার আর বড় বড় বাড়ি বানিয়ে রাখলে সেটা কারো উপকারে আসে না। তিনি হবিগঞ্জের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, এক সময় ৬ মাইল পথ হাঁটতে চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগতো। রাস্তাঘাট ছিল না। নৌকায় চলাচল করতে হতো। এখন ঘরে ঘরে গাড়ি যায়। এলাকার যে কোনো সুবিধা-অসুবিধা ও দাবি আদায়ে দৈনিক মানবজমিন সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, নবীগঞ্জ শহরের মাত্র ২৫ হাজার মানুষ গ্যাস সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ নবীগঞ্জেই গ্যাস উৎপাদন হয়ে থাকে। অতীতে নবীগঞ্জের উন্নয়নে ও রাজনীতিতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি। সিলেটে কলেজছাত্রীর ওপর বর্বর হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কোন যুগে বসবাস করছি ভাবতে অবাক লাগে। একজন নারী শিক্ষার্থীর ওপর কেউ এভাবে নির্যাতন চালাতে পারে তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। গ্রেটার লন্ডন নবীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি নেহার মিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে, সেক্রেটারি তুহিন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ চৌধুরীর পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী, নবীগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারপার্সন আবুল কালাম আজাদ ছোটন, হবিগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএ আজিজ, গীতিকার জাহাঙ্গীর রানা, বৃটিশ-বাংলাদেশি ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শাহানুর খান, সাবেক মেয়র জিলানী চৌধুরী, কমিউনিটি নেতা তসনু বেগ, চ্যানেল আই ইউরোপের চেয়ারম্যান রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী সুয়েব, বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন, মুখলেছুর রহমান চৌধুরী, মুহিব চৌধুরী, মতিয়ার চৌধুরী, রহমত আলী, শাহ ইমাম মেহেদী, সৈয়দ এহমার হোসেন, আমিনুর রশিদ তালুকদার, ব্যারিস্টার মাহমুদুল হক, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল বাতেন, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, নজরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া, ডা. নূরুল আলম, আতিকুর রহমান, এমএ রউফ, কাউন্সিলর ফারুক আনসারি, রুমান বখত চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর সাবিনা খানম, ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান, ড. মুজিবুর রহমান, ব্যারিস্টার এমএ সালামসহ কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মতিউর রহমান চৌধুরী শুধু নবীগঞ্জ বা হবিগঞ্জেরই গর্বিত সন্তান নন, গোটা বাংলাদেশের একজন কৃতী সাংবাদিক। তিনি তার সংবাদপত্রের মাধ্যমে সবসময় হবিগঞ্জের সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরেছেন। নিজ এলাকার তরুণ ও যুবকদের দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জ থেকে এখন অনেক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। এর পেছনেও তার বড় অবদান রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.