অনার কিলিং
পাকিস্তানে আইনের এক দুর্বলতা ব্যবহার করে কথিত ‘অনার কিলিং’ করেও পার পেয়ে যেত অপরাধীরা। অবশেষে ওই ফোকর বন্ধ করেছে দেশটির সরকার। নতুন এক আইনে হত্যাকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক যাবজ্জীবনের বিধান রাখা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। পূর্বের আইনে ‘অনার কিলিং’য়ের শিকার ব্যক্তির পরিবারের কোনো সদস্য অপরাধীকে ক্ষমা করে দিলে তাকে শাস্তি পেতে হতো না। তবে নতুন করা আইনে বলা হয়েছে, ক্ষমা করার মাধ্যমে বড়জোর মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেতে পারে হত্যাকারী। তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেতেই হবে। পাকিস্তানের অনেক স্থানেই পরিবারের মেয়েদের প্রেম বা পরিবারের অনিচ্ছায় বিয়েকে পরিবারের জন্য সম্মানহানিকর ভাবা হয়। ফলে ওই মেয়েদের ওপর খোদ তার পরিবারই আক্রমণ করে বসে। হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান (এইচআরসিপি) নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার মতে, গত বছর দেশটিতে আত্মীয়দের হাতে প্রায় ১,১০০ নারী অনার কিলিংয়ের শিকার হয়েছে। অনেক ঘটনা কেউ জানেও না। আগের আইনি দুর্বলতার সুযোগে অনার কিলিংয়ের হোতারা পার পেয়ে যেত। কারণ, সাধারণত ভিকটিমের কোনো আত্মীয়ই পরিবারের ‘সম্মান’ রক্ষার অজুহাতে হত্যা বা হত্যাচেষ্টা করে থাকে। পরে আবার ভিকটিমেরই পরিবার তাদের ক্ষমা করে দেয়। কেননা, হত্যাকারীও পরিবারেরই সদস্য। অর্থাৎ, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে পরিবারের এক ধরনের সম্মতি থাকে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে কয়েকটি হাই-প্রোফাইল অনার কিলিংয়ের ঘটনা পাকিস্তানে ও বিদেশের পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নারী সামিয়া শহীদ, যাকে জুলাইয়ে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, পরিবারের অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করায় তার পিতা ও সাবেক স্বামী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। একই মাসে পাকিস্তানের সোস্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি কান্দিল বালুচকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এবার অভিযোগ তার আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে। সংশোধিত নতুন আইনটি নিয়ে বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টা বিতর্ক হয় পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে। এরপর সর্বসম্মতিক্রমে আইনটি পাস হয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা নারীদের সহিংসতার হাত থেকে বাঁচাতে আরো কঠোর আইনি সুরক্ষার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। পাকিস্তানি অ্যাক্টিভিস্ট ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শারমিন ওবায়েদ এই বিল পাসের পেছনে জড়িতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। অনার কিলিং নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে অস্কারজয়ী এই নির্মাতা বলেন, ‘রাতারাতি এর পরিবর্তন হবে না। কিন্তু সঠিক পথে এটি অবশ্যই একটি পদক্ষেপ।’ তবে অনেকে সতর্ক প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন। একটি হত্যাকাণ্ডকে অনার কিলিং হিসেবে বিবেচনা করা হবে কি না, তার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে বিচারককে। এ নিয়েও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.