এশিয়ার বাজারে অকস্মাৎ বড় ধরনের দরপতন বা ফ্ল্যাশ ক্র্যাশ হয়েছে পাউন্ডের। একপর্যায়ে পাউন্ডের দাম ৬ শতাংশ কমে ১.১৮৪১-এ দাঁড়ায়। ব্রেক্সিট ভোটের পর এটিই বৃটিশ মুদ্রার সর্বোচ্চ দরপতন। তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পর পাউন্ডের দাম দাঁড়ায় ১.২৪ ডলারে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। খবরে বলা হয়, অকস্মাৎ এ তীব্র দরপতন বা ফ্ল্যাশ ক্র্যাশের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং সিস্টেমের প্রতিক্রিয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলেছে, এর কারণ তদন্ত করছে তারা। এর আগে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদে বৃটেনের সঙ্গে ‘কড়া ব্রেক্সিট সমঝোতা’র দাবি করছেন। এর একদিন পরই পাউন্ডের ওই অকস্মাৎ দরপতন ঘটে। মেলবোর্নের আইজির বাজার বিশ্লেষক অ্যাঙ্গাস নিকলসন বলেন, ‘কী কারণে এমনটা হয়েছে তা সঠিকভাবে বলা কঠিন।’ বৃটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছেড়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই পাউন্ডের অবস্থা অস্থিতিশীল। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, একটি কম্পিউটার হয়তো এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যা ব্রেক্সিট সংক্রান্ত নেতিবাচক খবর খুঁজে বের করবে। খুঁজে পেলে পাউন্ড বিক্রি করে দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে ওই প্রোগ্রামকে। এর ফলে এমনটি ঘটতে পারে। আবার স্রেফ ভুলের কারণেও এমনটা হতে পারে। কিবোর্ডে ভুল ইনপুটের কারণে ঘটে থাকতে পারে এটি। তবে জেপি মরগানের বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ভুলের কারণে হয়তো এই দরপতন ঘটেনি। পাউন্ডের এই অকস্মাৎ দরপতন এমন একটি সময়ে ঘটেছে যখন পাউন্ডের কেনাবেচা কম হচ্ছে। এর অর্থ হলো- এই সময়ে কম দামে পাউন্ডের বেচাকেনার প্রভাব অন্য সময়ের চেয়ে বেশি হবে। এই পরিস্থিতি সম্ভবত ট্রেডিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে আরও বর্ধিত হবে। এই অ্যালগরিদম (অ্যালগো নামেও পরিচিত) তৈরি করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেডিং করার জন্য এবং এটা মানুষের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুততার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। সিটি ইনডেক্সের গবেষণা পরিচালক ক্যাথলিন ব্রুকস বলেন, ‘এই সময়ে খবরের ওয়েবসাইটের ওপর ভিত্তি করে অনেক অ্যালগো কেনাবেচা করে থাকে। এবং এরা অনেক সময় টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কোনো বিষয়গুলো ট্রেন্ডিং বা আলোচিত, তার ওপর ভিত্তি করেও ট্রেডিং করে থাকে। ফলে ব্রেক্সিটের ওপর সংবাদের সাইটগুলোতে নেতিবাচক খবরের শিরোনামের আধিক্য দেখা দিলে অ্যালগোগুলো ধারণা করে নিতে পারে তা পাউন্ডের বড় ধরনের পতনের ইঙ্গিত।’ তিনি বলেন, ‘পাউন্ডের দাম আরও কমতে শুরু করলে অ্যালগোগুলো একই প্রবণতা অনুসরণ করতে পারে। এতে করে পাউন্ডের বিক্রির ওপর চাপ আরও বাড়বে।’ পাউন্ডকে এমন আরও তীব্র ও আকস্মিক দরপতনের মুখে পড়তে হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি যন্ত্রের কেনাবেচার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যাকেই এটা স্পষ্ট করে তুলে। তবে এটাই বাস্তবতা এবং এটাই আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাতে করে আরও একটি ফ্ল্যাশ ক্র্যাশ খুবই সম্ভব।’ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বৃটেনের বেরিয়ে আসার আলোচনার ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখনও অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন। গত রোববার বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে জানান, আগামী বছরের মার্চ নাগাদ তিনি ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অনুচ্ছেদ ৫০ কার্যকর করবেন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাংক ওয়েস্টপ্যাকের সিনিয়র কারেন্সি স্ট্র্যাটেজিস্ট শেন ক্যালোর মতে, এরপর থেকেই ‘নিচের দিকে ধাবিত’ হচ্ছে পাউন্ড। এইচএসবিসির বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ পাউন্ডের দাম ১.১০ মার্কিন ডলারে এবং ইউরোর সমপরিমাণে নেমে আসতে পারে। এইচএসবিসির ফরেন এক্সচেঞ্জ রিসার্চের প্রধান ডেভিডি ব্লুম বলেন, ‘আমাদের সামনে এখনও পর্যন্ত যে যুক্তি দেখানো হয়েছে তা হলো যুক্তরাজ্য ও ইইউ তাদের মতপার্থক্যগুলোর সমাধান করবে এবং একটি বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তিতে উপনীত হবে। এই ধরনের যুক্তি পরাবাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে অনেক ইউরোপিয়ান দেশ আলোচনার টেবিলে আসবে, যারা অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমিত করার তুলনায় রাজনৈতিক ক্ষতি সীমিত করার দিকে নজর রাখবে। এর অনিবার্য একটি ফলাফল হলো উভয় দিকেই ক্ষতি।’ ফ্ল্যাশ ক্র্যাশের পরপরই পাউন্ড খানিকটা ঘুরে দাঁড়ালেও গতকালের এই দরতনের আরও বড় প্রভাব পড়তে পারে। ইটিএক্স ক্যাপিটালের ট্রেডার মার্ক প্রিস্ট বলেন, ‘এটা আস্থার বিষয় হয়ে পড়েছে। এমন কিছু কি লুকানো রয়েছে যা সম্পর্কে আমরা এখনও জানি না?’ সিঙ্গাপুরে কেজিআই সিকিউরিটিজের নিকোলাস টেও বলেন, ‘এটা গভীরভাবে আন্তঃসম্পর্কিত এবং অনেক বেশি স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিংয়ের বিশ্ব। আজ (শুক্রবার) সকালে আমরা স্টার্লিয়ের কেনাবেচায় যে তীব্র দরপতন দেখেছি তা অনেকের জন্য নিশ্চিতভাবেই অনিচ্ছাকৃত পরিণতি বয়ে আনবে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.