ভ্রাম্যমাণ আদালত, জেল জরিমানা কোনো কাজেই আসেছে না বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে। বগুড়ার সাম্প্রতিক সময়ে সব চেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে সারিয়াকান্দি উপজেলায়। বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া গেছে প্রায় ৩০টি। অপর দিকে শাজাহানপুর উপজেলায় ৮ই অক্টোবর পর্যন্ত গত ৩ মাসে বাল্যবিয়ের আসরে ২৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিবাহ রেজিস্টার, বর, বর-কনের বাব-মা, আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীসহ মোট ৩১ জনের জেল-জরিমানা করা হয়। এরমধ্যে ১৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ১৫ জনের নিকট থেকে আর্থিক জরিমানা আদায় করা হয়। এর পরেও থামানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ের আয়োজন। সরজমিনে সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একের পর এক বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে। চর এলাকার পাশাপাশি সারিয়াকান্দি সদর এবং উঁচু অঞ্চলগুলোতেও সমানতালে হচ্ছে বাল্যবিয়ে। ওই উপজেলার ১২ ইউনিয়নের যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর চর গ্রামগুলোতেও প্রায় দুই লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এসব মানুষেরা কৃষি কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। অধিকাংশ মানুষেরাই অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে তাদের তেমন কোনো জ্ঞান নেই। আর যার কারণে অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমন পারিবারিক সহিংসতা তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে অকালে মা ও শিশুর মৃত্যুর হার। সংবাদ নিয়ে জানা গেছে, বাল্যবিয়ে আয়োজনের ক্ষেত্রে কেবল বাবা-মা’ই সহযোগিতা করছেন না। এক্ষেত্রে সমাজের অনেক সচেতন মহলের সহযোগিতায় প্রায় প্রতিদিনই সু-সম্পাদন হচ্ছে বাল্যবিয়ের অনুষ্ঠান। বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে (ইউএসএআইডি) প্লান বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতায় গ্রাম বিকাশ সংস্থা নামে এনজিও বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত করলেও তা কেবলমাত্র কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। তাদের নামমাত্র কর্মকাণ্ড এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধের কোনো প্রভাব পড়ছে না। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছেন, বাল্যবিয়ে হওয়ার পর জানা যাচ্ছে এ সম্পর্কে সংবাদ। গত তিন মাসে সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রায় ৩০টি বাল্যবিয়ে হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ফুলবাড়ী গ্রামের তোতা প্রামাণিকের মেয়ে ফুলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী লিমা আকতার, শ্রী মিঠু বর্মনের মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী শ্রীমতি মিতা রানী, শহিদুল ইসলামের ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে শহিদা আক্তার, আবদুল মান্নানের মেয়ে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রী সুবর্ণা আক্তার, ফুলবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে শাবনুর, একই গ্রামের ডাবলুর মেয়ে সাথী খাতুন, ওই গ্রামের মমেদআলী মণ্ডলের ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে শান্তনা, আমতলী গ্রামের তুজু প্রামাণিকের মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জিনিয়া, আজিজুল প্রামাণিকের মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী আখি আক্তার, সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রী তাছলিমা আক্তার, সদর ইউনিয়নের পার তিতপরল গ্রামের রনজু আকন্দের ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে চামেলি আকতার, একই গ্রামের ছবরুলের ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ছাবিনা আক্তার, কুতুবপুর ইউনিয়নের শোলারতাইড় গ্রামের মহাতাব আকন্দের ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মনিকা আক্তার, কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের উল্যাডাঙ্গা গ্রামের শাহিন কাজীর ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে রেহেনা আক্তার, চর শোনপচা গ্রামের কিনু মিয়ার ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রী চায়না আক্তার, বোহাইল ইউনিয়নের ধারাবর্ষা চর গ্রামের কালাম মিয়া ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে একই গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে আশারাফ আলী (১৫) সঙ্গে। ধারাবর্ষা চরের আসাদ আহম্মেদ খান, কালাম উদ্দিন খান জানান, এ বাল্যবিয়েটি সম্পাদন হয়েছে ভুয়া জন্মনিবন্ধন ও ভুয়া সাক্ষী বানিয়ে। বিয়ের রেজিস্ট্রিতে উল্লেখিত সাক্ষী হাবিজার খান, মিন্টু, আশকর আকন্দ ও হরমুজ আকন্দ জানান, সাক্ষীর ঘরে আমাদের নাম উল্লেখ করার বিষয়টি আমরা পরে জানতে পেরেছি হয়েছি। এ বাল্যবিয়েটি সম্পাদন করেছে স্থানীয় বিবাহ নিবন্ধক মো. আবুল কালাম মুন্সি। অন্যদিকে কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য উদ্যোক্তা শাহিন আলম সুজন মিয়া মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলার গুলারতাইর গ্রামের ভুলু মিয়ার ৯ম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে শাবানা আক্তার ইতিকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হয়েছে। বাল্যবিয়ে ব্যাপারে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, উপজেলায় বাল্যবিয়ের হিড়িক পড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। বাল্যবিয়ে সম্পর্কে কোনো সংবাদ যে কোনো সময় পাওয়া মাত্রই তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়ে তা বন্ধের ব্যবস্থা করছি। শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাফিউল ইসলাম বলেন, তার উপজেলায় যে কোনো মূল্যে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে তিনি তৎপর আছেন। বাল্যবিয়েতে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.