স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকেই বিশ্বব্যাংক তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। চার দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নকাজে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে সংস্থাটি। মাঝখানে পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু ভুল-বোঝাবুঝি হলেও তা কেটে গেছে। আগের চেয়েও অধিক মাত্রায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। সফররত বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা আগামী দিনগুলোতে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তদুপরি শিশু অপুষ্টি রোধে বাড়তি ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা প্রদানেরও ঘোষণা দেন তিনি। সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় আগের মতোই এক বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে থাকবে বিশ্বব্যাংক। আমরা বিশ্বব্যাংকপ্রধানের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই এবং বিশ্বব্যাংককে সব সময়ই আমরা আমাদের পাশে পেতে চাই।
বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত, উন্নত দেশগুলোতেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে এসেছিল, তখনো বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশের বেশি। সেই প্রবৃদ্ধি এখন ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তা ৮ শতাংশ হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি রপ্তানি আয় ক্রমেই বাড়ছে। আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্য আসছে। তৈরি পোশাকের গণ্ডি ছাড়িয়ে রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন নতুন খাত যুক্ত হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন গতি পেয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করা গেছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে কর্মসংস্থান। তাই দারিদ্র্য ক্রমেই বিদায় নিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। বিশ্বব্যাংকপ্রধানও আশা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অতি দরিদ্র মানুষের হার শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক অনেক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু রোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। নারী-পুরুষের বৈষম্য কমেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা বিশ্ববাসীর কাছে রীতিমতো বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকপ্রধানও সে কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার অগ্রযাত্রার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, ১৯৫৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সে অবস্থাও ছিল না। অথচ আজ দক্ষিণ কোরিয়া এক সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ। অগ্রযাত্রার এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশও অচিরেই সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
আমরাও চাই, বিশ্বব্যাংকপ্রধানের এই প্রত্যাশা বাস্তবতা পাক। আশাবাদ প্রকাশের পাশাপাশি লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি কিছু করণীয় বিষয়ের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুস্থ, কর্মক্ষম ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। আমরাও তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি। এ জন্য জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির আরো উন্নতি করতে হবে এবং শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য সম্প্রসারিত করতে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। আমরা আশা করি, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে যাবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.