গুলিস্তানে পথচারীদের পায়ে চলার পথ দখল করে বসানো শত শত অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। উচ্ছেদ করা স্থান রাতারাতি দখল হয়ে যায়। বৃহস্পতিবারের সফল উচ্ছেদ অভিযানের পরও হকাররা যথারীতি ফিরে এসেছে। সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) উচ্ছেদ অভিযানে ছাত্রলীগের শরিক হওয়া ও দুই নেতার অস্ত্রের ব্যবহারও আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা ছাত্রনেতা—কেউ আইনি কাঠামোর বাইরে থাকতে পারে না। উচ্ছেদ অভিযানে অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহারের ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রমাণ হাতে আসার পরও মামলা না হওয়া ও অস্ত্রধারীদের আটকের উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়টিও হতাশাজনক।
বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের বললেন, ‘তোমরাই হবে আগামী দিনের নেতা, দেশের পরিচালক। আমরা কোনো দুর্বৃত্তায়ন দেখতে চাই না, সন্ত্রাস চাই না।’ কালের কণ্ঠসহ জাতীয় সব দৈনিকে খবরটি ছাপা হওয়ার দিনই গুলিস্তানে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে অস্ত্র দেখা গেল। পুলিশ নিয়ে ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করবে সিটি করপোরেশন। তারা কি এতটাই অসহায় যে একটি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাখতে হবে? ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটিই বা কেন পেশিশক্তি প্রদর্শনের কাজে ব্যবহৃত হবে?
রাজধানীর প্রধান সমস্যাগুলোর অন্যতম যানজট। অনেক স্থানে সড়কের পাশে দোকান বসিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। আবার যানজটের শিকার পথচারীরা হেঁটে চলবে ফুটপাতে সে সুযোগ নেই। বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফর বেটার বাংলাদেশের (ডাব্লিউবিবি) জরিপ মতে, রাজধানীতে প্রায় দুই লাখ ৩৫ হাজার হকার ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদেরও কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে চাঁদা থেকে। কখনো যদি অভিযান চলেও তা অনেকটাই হয় লোকদেখানো।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও সংসার আছে, অনেক কষ্টের পুঁজি তাদের—সব ঠিক আছে। ব্যবসা অবশ্যই আইনের মধ্যে থেকে করতে হবে। ফুটপাতে দোকান বসিয়ে যানজট সৃষ্টি করে লাখ লাখ পথচারীকে ভোগান্তিতে ফেলার কোনো অধিকার কারো নেই। রাজধানীতে বেশ কিছু হকার মার্কেট করা হয়েছে। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা তাদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন নতুন মার্কেট করার দাবি জানাতে পারে। তা না করে তারা আইন ভঙ্গ করছে, প্রশাসনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্বের বাস-অযোগ্য নগরীগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে স্থান করে নিয়েছে যেসব কারণে তার অন্যতম হচ্ছে যানজট। যাতায়াতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ার কারণে কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। যানজট হ্রাসের প্রয়োজনেও রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা প্রয়োজন। গুলিস্তানের হকাররা ফের রাস্তা দখল করেছে। সিটি করপোরেশন তাদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে পারে না। অন্যত্র উচ্ছেদ অভিযান চলবে, আর গুলিস্তানে সহানুভূতি দেখানো হবে? জনস্বার্থে গোটা রাজধানীর ফুটপাত দখলমুক্ত হতে হবে। উচ্ছেদের পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবে না। তদন্ত হওয়া উচিত ছাত্রলীগ নেতাদের অস্ত্রবাজিরও। কারণ কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.