পাকিস্তান পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় জঙ্গিবাদ রপ্তানি করছে, এ অভিযোগ প্রমাণিত। বাংলাদেশে অনেক আগেই তাদের সেই কালো হাত বিস্তৃত হয়েছে। এমন অনেক তথ্যপ্রমাণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এসেছে। গতকালের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন অনেক তথ্য। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও সামলাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো হিমশিম খাচ্ছিল। এই সুযোগে পার্বত্য এলাকা কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলগুলোয় গড়ে তোলা হয় বেশ কিছু প্রশিক্ষণ শিবির। এতে সহযোগিতা করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, জামা’আতুল মুজাহিদীন ও পাকিস্তানি তালেবান। তেমন কিছু প্রশিক্ষণ শিবির পরবর্তীকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আবিষ্কারও করে। এসব শিবির বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনায় মূল ভূমিকা পালন করে মিয়ানমারের কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ব্যাপকতা পেয়েছিল, যার প্রমাণ পাওয়া যায় পরবর্তীকালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে। সম্প্রতি মিয়ানমারের মিজিমাডটকম, চ্যানেল নিউজ এশিয়াসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে এসব তথ্য। ভারতে অনুষ্ঠিত বিমসটেকের বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও পাকিস্তানের জঙ্গিবাদ রপ্তানির বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াও সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারের আরাকানে নাশকতাকারীদের প্রশিক্ষণ ও অর্থ সাহায্য দিচ্ছে পাকিস্তানের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন। মধ্যপ্রাচ্য থেকেও এরা অর্থ সাহায্য পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চল, রোহিঙ্গা সমস্যা ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো সতর্ক অবস্থান নিতে হবে।
রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশেরও কিছু জঙ্গি সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এরা প্রচ্ছন্ন সমর্থন পেয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার দেশের ভেতরে জঙ্গি হামলার সঙ্গেও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে জানা গেছে। গত মাসে মিয়ানমারের তিনটি পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে জঙ্গিরা পুলিশ সদস্যদের হত্যা ও অস্ত্র লুট করে। তার কিছুদিন আগে তারা কক্সবাজারের এক আনসার ফাঁড়িতে হামলা করে এবং অস্ত্র লুটে নেয়। ভারতেও বিভিন্ন হামলায় রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জইশ-ই-মোহাম্মদ নেতা আদিল পাঠান ও ছোটা বারমী নামে দুজন নিহত হয়। এই ছোটা বারমী ছিলেন একজন রোহিঙ্গা নেতা। আইএসের সঙ্গেও তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়। তার মানে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে। তাই নিজস্ব নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান দ্রুততর করতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.