দেশে গত অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়েছে ১৫০ মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে।
আর এ সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি-রফতানির পরিমাণ, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআর) এবং রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ও পরিমাণও বেড়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন’ উপস্থাপন করা হয়। এ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই প্রতিবেদন অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে জাতীয় ট্যাক্সকার্ড নীতিমালা-২০১০ (সংশোধিত), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট আইন-২০১৬ ও বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউট আইন-২০১৬-এর খসড়া এবং ডি-৮ সনদ অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা টেস্টে ১০৮ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ১-১ সিরিজ ড্র করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন আর্থসামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দেশে মাথাপিছু আয় ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার।
আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে। ফলে এক বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৫০ মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ৩৪ হাজার ২৫৭ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের (২০১৪-১৫) তুলনায় ১৯ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।’
জনশক্তি রফতানি বাড়লেও রেমিটেন্স কমেছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশে জনশক্তি প্রেরণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৭ জন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৬। অর্থাৎ এক বছরে ৪৮ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি জানশক্তি রফতানি হয়েছে। তবে জনশক্তি রফতানি বাড়লেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স আড়াই শতাংশ কমেছে।
গত বছর দেশে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিবি) সংশোধিত বরাদ্দ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকার মধ্যে ৮৬ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা (৯৩ শতাংশ) ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের আওতায় ২৭৭টি প্রকল্পের মধ্যে ২৪৫টিই শেষ হয়েছে।
এর ফলে আগের বছরের চেয়ে এডিবিতে ব্যয়ের পরিমাণ ৯ হাজার ৩১ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার অব্যাহতভাবে কমে ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে সামাজিক বৈষম্যও।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ও চাহিদার পরিমাণ গত অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ২১৯ মেগাওয়াট বেড়েছে। ৩১ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও ১৯৮ সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
আগের অর্থবছরের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, লোডশেডিং কমেছে ৩২ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন সিস্টেম লস ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে।
ট্যাক্সকার্ড পাবেন ১২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান : সেরা করদাতা হিসেবে ২০ জনের পরিবর্তে এখন থেকে ১২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্সকার্ড দেবে সরকার। এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, ট্যাক্সকার্ড নীতিমালার আলোকে দুই ক্যাটাগরিতে (ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান) ১০ জন করে মোট ২০ জনকে ট্যাক্সকার্ড দেয়া হতো। নীতিমালা সংশোধন করে এ সংখ্যা (ট্যাক্সকার্ডধারীদের) বাড়াতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
এখন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১২৫টি ট্যাক্সকার্ড দেয়া হবে। তিনি জানান, নীতিমালা সংশোধন হওয়ায় এখন থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ৬৪টি, কোম্পানি পর্যায়ে ৫০টি এবং অন্যান্য পর্যায়ে ১১টি ট্যাক্সকার্ড দেয়া হবে। ব্যক্তি পর্যায় বিশেষ শ্রেণী ক্যাটাগরিতে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পাঁচজন, প্রতিবন্ধী দুইজন, নারী করদাতা পাঁচজন এবং তিনজন তরুণ করদাতা (৪০ বছরের কম বয়সী) ট্যাক্সকার্ড পাবেন।
পাশাপাশি আয়ের উৎস হিসেবে পাঁচজন ব্যবসায়ী, পাঁচজন বেতনভোগী, পাঁচজন চিকিৎসক, তিনজন সাংবাদিক, তিনজন আইনজীবী, তিনজন প্রকৌশলী, দুইজন স্থপতি, দুইজন অ্যাকাউনটেন্ট, সাতজন নতুন করদাতা, দুইজন খোলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী দুইজন, শিল্পী-গায়িকা দুইজন এবং অন্যান্য তিনজন এ কার্ড পাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোম্পানি করদাতাদের মধ্যে ব্যাংক খাতে চারটি, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতে চারটি, টেলিকমিউনিকেশনে একটি, প্রকৌশলে তিনটি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তিনটি, জ্বালানিতে তিনটি, পাটে তিনটি, স্পিনিংয়ে পাঁচটি, ওষুধে চারটি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকে চারটি, রিয়েল এস্টেটে তিনটি, তৈরি পোশাকে সাতটি, চামড়াশিল্পে দুইটি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে চারটি কার্ড দেয়া হবে।
অন্যান্য শ্রেণীর ক্ষেত্রে ফার্মে চারটি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষে একটি, ব্যক্তিসংঘে দুইটি এবং অন্যান্য খাতে চারটি ট্যাক্সকার্ড দেয়া হবে। শফিউল বলেন, ‘মন্ত্রিসভা অর্থমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছে, তিনি যদি প্রয়োজন মনে করেন, তার পরামর্শক্রমে এনবিআর এ সংখ্যা বাড়াতে পারবে।’
শফিউল বলেন, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতাদের মধ্য থেকে কারা কার্ড পাবেন, তা বাছাই করতে কমিটি থাকবে। ট্যাক্সকার্ডধারীরা বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ, বিমান-রেলপথসহ যে কোনো ভ্রমণে সরকারি যানবাহনের টিকিট প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পান। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ ছাড়াও আবসিক হোটেলে বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার এবং ট্যাক্সকার্ডধারী নিজে এবং তার স্ত্রী, স্বামী ও সন্তানরা সরকারি হাসপাতালে কেবিন সুবিধা পান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.