রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও ভবনটির নির্মাণকাজ প্রায় পাঁচ বছর আগেই শেষ হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ভবনের তৃতীয় তলায় ফ্লোরের প্লাস্টার উঠে গেলে বাঁশ দেখা যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে তড়িঘড়ি করে ভাঙা অংশটি আবার প্লাস্টার করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় হাসপাতালজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ভবনটি উদ্বোধনের পর সেখানে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। চারটি ফ্লোরে রোগী, তাদের স্বজন, চিকিৎসক-নার্স, হাসপাতালের কর্মচারীসহ সব মিলিয়ে অন্তত এক হাজার মানুষ অবস্থান করছে। তবে ফ্লোরে বাঁশ ব্যবহারের খবর ছড়িয়ে পড়লে অবস্থানকারীদের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
গত ২০১২ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল আমিন উদ্বোধন করেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক হাজার শয্যার ভবনটি। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয় পুরনো ভবনগুলোর মাঝখানে। অর্থাৎ হাসপাতালে ঢুকতেই হাতের ডান দিকে।
গতকাল সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোটা আকৃতির বাঁশ কেটে সেখানে বাঁশের ফালা ব্যবহার করা হয়েছে রডের পরিবর্তে। প্লাস্টারের ওপর আবার পুরনো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কাপড়ের নিচে সিমেন্ট আর বালু দিয়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। প্লাস্টারের নিচে বাঁশের ওপর পত্রিকা বিছানো রয়েছে। যেন মেশানো সিমেন্ট ও বালু পড়ে না যায়। জানতে চাইলে হাসপাতালের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন রোগীর স্বজন জুলহাস আলী বলেন, ‘হাসপাতালের ভবন বহুতল, এই ভবন নির্মাণে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। সেটি দেখেও এলাম। এখন এই ভবনে থাকতেই ভয় লাগছে। নিজের রোগী নিয়ে এখান থেকে পালাতে পারলেই বাঁচি। সকাল হলে চিকিৎসককে বলে রোগী নিয়ে বাড়ি চলে যাব।’
এদিকে বিষয়টি তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার, প্রকৌশলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে জোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই হাসপাতালের নতুন ভবনটি মাত্র বছর চারেক আগে নির্মাণ করা হলেও এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। আবার টাইলসও উঠে যাচ্ছে। এতে করে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরপরই ব্যাপক অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে উদাসীন মনোভাব পোষণ করে আসছে সব সময়। ফলে এখন পুরো ভবনটিই আতঙ্কের ভবনে পরিণত হয়েছে।’
এদিকে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য রাতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি আমাকেও কয়েকজন জানিয়েছে। তবে আমি দেখিনি। আর ওই ভবনটি নির্মাণ হয়েছে আমি আসার চার-পাঁচ বছর আগে। ভবনটি নির্মাণ করেছে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ। তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবে।’
ভাঙা স্থানে কারা নতুন করে প্লাস্টার করেছে, সেটি জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, এটিও মনে হয় গণপূর্ত বিভাগের লোকজনই করে গেছে। কারণ ভবনটি তারাই করেছে।
এদিকে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে রাতে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লতিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা গলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.