পুরুষদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি হয়েছে একটি হরমোন ইনজেকশন। সেটি প্রায় ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ২৭০ জন পুরুষের ওপর এটি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষদের ওপর এটির পরীক্ষা চালানো হয়েছে, যারা এক বছরের জন্য শুধু একজন নারীর সঙ্গেই সম্পর্ক রেখেছেন। প্রতি আট সপ্তাহ অন্তর তাদের দুটি করে হরমোন ইনজেকশন দেয়া হয়েছে এবং ছয় মাস ধরে তাদের শুক্রাণুর পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব পরীক্ষায় বেশ সফল ও কার্যকর হয়েছে হরমোন ইনজেকশনটি। তবে বিশ্বব্যাপী জন্মনিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সাধারণত নারীরাই নিয়ে থাকেন। নারীরাই যেহেতু গর্ভধারণ করেন তাই এটা তাদেরই দায়িত্ব- সামাজিক ধারণাটা এমনই। বিবাহিত অথবা অবিবাহিত হোন, গর্ভধারণ করতে না চাইল তার দায়ভার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীকেই নিতে হয়। নারীদের জন্য রয়েছে পিল, ইনজেকশন, কপারটির মতো নানা ব্যবস্থা। এগুলোর রয়েছে নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কিন্তু পুরুষদের জন্য রয়েছে শুধু কনডম, যা অনেকেই আবার পছন্দ করেন না। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে পুরুষের দায় এখানে কতটা? লন্ডনের রাস্তায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেককেই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্নটি। নারী আর পুরুষদের উত্তর অনেকটাই ভিন্ন ছিল। যেমন একজন নারী বলেছেন, ‘আমার সবসময়ই মনে হয়েছে এটা একটা অন্যায় যে, জন্ম রোধ করার দায়িত্ব শুধু নারীর ওপরেই বর্তায়। আমার বান্ধবীদের অনেককেই দেখেছি জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেয়ার পর তাদের নানা ধরনের সমস্যা হয়েছে। তাদের জীবনটাই বদলে গেছে’। নারীদের জন্য যেসব জন্মনিরোধ পদ্ধতিগুলো রয়েছে তার নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলছিলেন এই নারী। যে হরমোন ইনজেকশনটি পুরুষদের দেয়া হয়েছে তারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন বিষাদ, পেশীতে ব্যথা ও একনি ইত্যাদি। সেগুলো নিয়েই উদ্বেগের কথা জানালেন পুরুষদের অনেকে। এক তরুণ বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমার মনে কিছুটা সংশয় আছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অথবা শরীরের স্বাভাবিক গঠনতন্ত্রে হস্তক্ষেপের ধারণাটা আমার ঠিক পছন্দ হলো না’। অন্য আরেকজনের মত হলো, ‘আমার মনে হয় আমি বরং প্রাকৃতিক নিয়মেই আগ্রহী হবো। আমার শরীর ও মনের ওপর বা আমার সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে এমন কিছু ব্যবহারে আমি আগ্রহী নই’। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার কারণে ২০১১ সাল থেকে নতুন করে এ গবেষণায় কোনো অংশগ্রহণকারী নেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো মেয়েদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা অন্য ধরনের ব্যবস্থায়ও রয়েছে? পাল্টা সেই প্রশ্ন তুলেছেন নারীদের অনেকেই। তাদের কি সেগুলো ব্যবহার না করার কোনো বিকল্প আছে? ‘আমরা পারলে ওরা পারবে না কেন? মেয়েরা তো রোজই এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’- সেটাই বলছিলেন একজন। পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি? এই ধারণায় হেসেছেন অনেক পুরুষ। ঢাকায় বেসরকারি একটি সংস্থায় কাজ করেন প্রণয় ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘নতুন বিয়ে করেছেন এমন কাউকে বিষয়টি নিয়ে ঠাট্টা করি আমরা অনেক সময়। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি এটা মেয়েরাই ব্যবহার করে। কিন্তু এটা নিয়ে কথা বলার কোনো জায়গা ছিল না’। বাজারে যদি পুরুষদের জন্য বড়ি অথবা হরমোন ইনজেকশন পাওয়া যায় তিনি নিজে কি তা ব্যবহার করবেন? জবাবে তিনি বলছেন, ‘আমি নিজে বিষয়টি নিয়ে ঠিক নিশ্চিত নই। দুজনে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেবো। কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তবে এরকম কিছু বাজারে এলে সেটা নিয়ে কি করবো এখনই বলাটা মুশকিল’। প্রায় বিশ বছর ধরে পুরুষদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তৈরির উদ্দেশ্যে গবেষণা চলছে। তবে মেয়েদের জন্য এমন ব্যবস্থা বাজারে এসেছে বহু আগেই। গর্ভধারণে নারী-পুরুষ দুজনেরই যদি ভূমিকা থাকে তাহলে জন্মনিয়ন্ত্রণের দায়টাও দুজনেরই নয় কেন? এখন সেই ধারণাও সামনে আসছে বেশ কিছু দিন ধরেই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.