বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম) ‘গ্লোবাল শেপার্স সার্ভে ২০১৬’ শিরোনামে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৮৭টি দেশের তরুণদের ওপর যে জরিপ করেছে, তার ফলাফল আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী তরুণদের বড় অংশটি অভিমত দিয়েছে যে, এদেশে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, বিপরীতে এর প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা আরও মনে করেন, সরকারের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কম, নেই রাজনৈতিক স্বাধীনতা। দেশে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ঘাটতিও যথেষ্ট বলে মনে করছেন তারা। জরিপকারীদের তারা আরও বলেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিই তাদের বেশি হতাশ করে। অংশগ্রহণকারী ৩৯ শতাংশ মনে করেন রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সততা ও আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জরিপ থেকে যা পাওয়া গেছে, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। দুর্নীতির যে চিত্র দেশে বিরাজমান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রতি বছরই তা ফুটিয়ে তুলছে। টিআইবিও বলে চলেছে একই কথা। বর্তমানে দুদকের কর্মতৎপরতা থেকেও স্পষ্ট হচ্ছে দুর্নীতি কতটা ছেয়ে গেছে দেশে। এবার তরুণ সমাজের মুখ থেকেই শোনা গেল দুর্নীতির কথা। যুগান্তরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও তরুণদের চিন্তার সঙ্গে সামগ্রিকভাবে সহমত পোষণ করেছেন। সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ঘাটতির বিষয়টিও আমাদের অজানা ছিল না। কিংবা তরুণরা যে বলেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সততা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, সেটাও সর্বাংশে না হলেও অধিকাংশে সত্য। একটা কথা এখন চালু হয়ে গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী একা আর কত দিক সামলাবেন। বিশেষত শাসক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই দেশপ্রেমের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীপ্রেমে মগ্ন রয়েছেন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকার যারা পরিচালনা করছেন, তাদের আন্তরিকতাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। সংসদ সদস্যদের অনেকেই তাদের মূল কাজ আইন প্রণয়নে কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখার বিষয়টির চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লাভালাভের ওপর। এক সংসদ সদস্য তো সম্পদের মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে কারাদণ্ডের রায়ও পেয়েছেন।
আলোচ্য জরিপটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। তরুণ সমাজ আমাদের জনসংখ্যার এক বড় অংশ দখল করে আছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের ব্যাপারে যদি তাদের মধ্যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে, তাহলে তা তাদের একটি হতাশ শ্রেণীতে পরিণত করতে পারে। আমাদের উচিত সমাজে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে তরুণদের উৎসাহিত করা। তাছাড়া দুর্নীতি দমনের বিষয়টি সমগ্র জাতির জন্য এক বড় ইস্যু। অর্থনৈতিক অগ্রগতি শুধু নয়, জাতির মর্যাদার প্রশ্নেও সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে সমাজের সব অসঙ্গতি দূর করতে এগিয়ে আসবে, এটাই প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.