২০০৮ সাল থেকে গঠিত জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ) নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতায় (ডিএসএ) মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ডিএফএ। ফুটবলের জন্য চাহিদা মতো স্টেডিয়াম দেয়নি ডিএসএ। অর্থ সংকটও মারাত্মক ছিল ডিএফএ’র। এখন এই ডিএফএ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক’দিন আগে বাংলাদেশ সফরে আসা ফিফা প্রতিনিধির কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করা হয়। বাফুফে সহ-সভাপতি বাদল রায় জানান, আমরা ডিএফএ’র বিষয়ে তিনটি পথে সমাধান খুঁজছি। সমাধানটা হতে পারে ডিএফএ বিলুপ্ত করার মধ্য দিয়েও। জেলার ফুটবলের ওপর বাফুফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, জেলাগুলোকে বাফুফের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা এবং সর্বোপরি জেলার ফুটবলে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতেই ডিএসএ থেকে আলাদা হয়ে ডিএফএ গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলো ফিফা। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত এ দেশের ফুটবল কর্মকর্তারা ফিফা-এএফসির কাছে এত বেশি অভিযোগ করেছিল যে, ফিফাও কঠোর হয় বাফুফের ওপর। তাছাড়া সে সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই বাফুফে কর্মকর্তারা বাধ্য হয়েছিলেন ফিফার নির্দেশনা মেনে নিতে। তখন থেকেই বাফুফে কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন সরকারি প্রভাবমুক্ত ডিএফএ গঠিত হলেও এর উপদেষ্টা কমিটিতে থাকবেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা, যাতে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জেলায় লীগ চালাতে প্রশাসনের সহায়তা পায়। কিন্তু শুরু থেকেই তখনকার বাফুফে কমিটির বিরোধী একটি পক্ষ কান ভারি করে জেলা স্টেডিয়ামের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি)। ডিএসএ থেকে ডিএফএ আলাদা হয়ে যাওয়ার পর তারা আর এনএসসির অধীনে থাকেনি। সূত্রমতে, এসব কারণেই ডিএফএকে স্টেডিয়াম ব্যবহার করতে অনীহা শুরু হয় ডিএসএ’র। ব্যক্তিত্বের সংঘাতও শুরু হয় ডিএফএ ও ডিএসএ কর্মকর্তাদের মধ্যে। পরে এ সমস্যার সমাধান এবং ডিএফএ যেন ক্রীড়া পরিষদের অনুদান ও খেলা চালানোর জন্য স্টেডিয়াম পায় এজন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। বছরে তিন-চার মাসের জন্য মাঠ বরাদ্দেরও অনুমতি মেলে। অবশ্য এরপরও সব জেলা লীগ আয়োজন করতে পারেনি ডিএফএ কর্মকর্তাদের যোগ্যতার অভাবেই। এসব কারণেই ডিএফএ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বাফুফে। ডিএফএকে সক্রিয় করার উপায় খুঁজতে গত এপ্রিলে বাফুফের নির্বাচনের আগে তিন কর্মকর্তা যান জুরিখে ফিফার দপ্তরে। সেই সফরে যাওয়া বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায় বলেন, ‘আমাদের কথা শুনে ফিফা কর্মকর্তারা বললেন, জেলায় ফুটবল কীভাবে চলবে, সেটা তোমরাই ঠিক করো। ফেডারেশনে এ নিয়ে আলোচনারও পরামর্শ দেন তারা।’ কিন্তু নির্বাচনের পর ছয় মাস পার হলেও সেই আলোচনা নেই। তবে ক’দিন আগে ঢাকায় আসা ফিফা প্রতিনিধিদলের কাছে বিষয়টা তুলেছিলেন বাফুফের দু-একজন কর্মকর্তা। এবারও ফিফা প্রতিনিধিরা আগেই কথা বলেছেন। আর বলেছেন নিজেরা আলোচনা করে দ্রুত ফিফার কাছে প্রস্তাব পাঠাতে। কী প্রস্তাব পাঠানো হবে, সেটাই ঠিক করে উঠতে পারছেন না কর্তারা। তবে বাদল রায় বলছেন, ‘আর কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। আমরা ফিফাকে বলেছি, এই ডিএফএ দিয়ে খেলা হচ্ছে না। গত নয় বছরে জেলার ফুটবল মরে গেছে।’ যদিও বাফুফের পরিকল্পনাহীনতা আর তৃণমূল উদ্যোগের অভাবই ফুটবলের দুরবস্থার বড় কারণ। তবু বাদল বলছেন, ‘ডিএফএ রাখতে হলে ডিএসএর সাধারণ সম্পাদককে ডিএফএ সভাপতি করার চিন্তা করেছিলাম আমরা। কিন্তু ২৫-৩০টা খেলা চালিয়ে ডিএসএ সম্পাদক কখন ফুটবল চালাবেন, সে প্রশ্ন আসেই। তাই ভাবনাটা জোরালো ভিত্তি পায়নি।’ বিকল্প হিসেবে ডিএফএ বাতিল করে আবার ডিএসএতে একীভূত হওয়ার চিন্তাও নাকি চলছে! বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগও বলছেন, এ ব্যাপারে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবো আমরা। কারণ, ফুটবলের উন্নয়নে ডিএফএ গঠন করা হয়েছিল, ফুটবল ধ্বংসের জন্য নয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.