একজন অভিনেত্রী কিংবা নৃত্যশিল্প দুই ক্ষেত্রেই সফল নাদিয়া আহমেদ। তবে নাচের চেয়ে অভিনয়ে বেশি দেখা মেলে তার। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভিন্ন ধাঁচের চরিত্রে অভিনয় করে বরাবরই দর্শক আলোচনায় রয়েছেন নাদিয়া। এ মুহূর্তে একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন তিনি। এসব নাটকের মধ্যে রয়েছে সকাল আহমেদের ‘বাবুই পাখির বাসা’, এসএ হক অলিকের ‘আয়না ঘর’, আল হাজেনের ‘লড়াই’, আবু হায়াত মাহমুদের ‘বৃষ্টিদের বাড়ি’, অঞ্জন আইচের ‘মেঘের পরে মেঘ’, প্রভৃতি। এছাড়া এনটিভিতে ‘সংসার’ ও দেশটিভিতে ‘উৎসব’ ধারাবাহিক দুটিতে অভিনয় করছেন নাদিয়া। ব্যস্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাতে এতগুলো নাটক। এগুলোর শুটিংয়ে সপ্তাহের প্রতিটি দিনই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আলাদা করে নিজের জন্য সময় পাচ্ছি না। বিশেষত অনেকের ফোন রিসিভ করতে পারি না। তবে এ ব্যস্ততাকে উপভোগ করছি। কাজের মাঝে থাকলে ভালোই লাগে। ধারাবাহিকে নিয়মিত অভিনয় করলেও খন্ড নাটকে খুব একটা কাজ করছেন না নাদিয়া। দীর্ঘদিন ধরে নাটকে অভিনয় করছেন এ পর্দাকন্যা। বর্তমান সময়ের নাটক নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক শোনা যায় প্রায়ই। নাটকের মান ভালো হচ্ছে না বলে দর্শক বিদেশী চ্যানেলমুখী হচ্ছেন দিন দিন। এ বিষয়ে নাদিয়ার মন্তব্য কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, চ্যানেল সংখ্যা বেড়েছে। কাজের মাত্রা বেড়েছে সে সঙ্গে। কাজের মান নিয়ে তো তাই প্রশ্ন আসবেই। ভালো নাটক যেমন হচ্ছে, তেমনই খারাপ কাজও হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্য দিয়েই চলছে। তবে একটু অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করি আমি। অস্থিরতা বলবো এই কারণে যে, অনেক প্রকৃত শিল্পীর কাজ কমে যাচ্ছে। যোগ্য লোকের মাধ্যমে কাজ হচ্ছে না। যে কারণে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আর অনেক সময় শিল্পী নির্বাচনের জন্য নির্মাতার পরিবর্তে এজেন্সি কিংবা চ্যানেলের একটা প্রভাব থাকে। ধারাবাহিক নাটক নিয়ে আজকাল একটা কথা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। আর তা হলো, ধারাবাহিকের ধারাবাহিকতা থাকছে না। আসলে সমস্যাটা কোথায়? এ ব্যাপারে নাদিয়ার মন্তব্য, কাজ অনেক বেশি হচ্ছে বলে শিল্পীদের সিডিউল নিয়ে ঝামেলা হয়। যে কারণে গল্প যেভাবে যাওয়ার কথা সেভাবে যায় না। সে সময় যে সব শিল্পী উপস্থিত থাকেন তাদের দিয়েই গল্পটা টেনে লম্বা করার প্রয়োজন হয়। আরেকটা সত্যি কথা-ভালো গল্পের বড় অভাব। আর যারা লিখছেন তারাও অনেক সময় বেশি লিখতে গিয়ে ভালোটা দিতে পারছেন না। এছাড়া বিজ্ঞাপনের একটা ঝামেলা তো রয়েছেই। নাটকের মাঝে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হলে আর শেষ হয় না। কিংবা একটি নাটক কখন শুরু হবে সেই নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা থাকে না। আমরা অন্য দেশের সিরিয়াল দেখে ঘড়ির সময় মেলাতে পারি। কিন্তু আমাদের দেশের নাটক দেখে সেটা কখনো মেলানো সম্ভব নয়। সত্যিকার অর্থে আমরা শিল্পীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি দর্শক ফেরানোর জন্য। এসব সমস্যার সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে দেশী চ্যানেলে বিদেশী সিরিয়াল বাংলায় ডাব করে প্রচার। এ নিয়ে নাট্যাঙ্গনের সবাই মিলে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আগামী ৩০শে নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সবার অংশগ্রহনে সমাবেশ হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাদিয়াও। তাহলে কি এই সমাবেশে তিনিও শামিল হবেন? নাদিয়া বলেন, আন্দোলনটা সময়ের দাবি। আমাদের টিভি ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এমনই এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এটাকে ক্রান্তিকাল না বলে পারছি না। আমরা নতুন-পুরনো শিল্পীরা সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরও কেন যেন সমস্যা কাটছে না। এর মধ্যে কিছু চ্যানেল একের পর এক বিদেশী সিরিয়াল প্রচার শুরু করেছে। এ নিয়ে ক্ষোভের জন্ম তো হয়েছেই। আর সেটা থেকেই আন্দোলন। আসলে আমরা ভুল পথেই যাচ্ছি মনে হচ্ছে। এখান থেকে মুক্তির পথ বের করতে হবে। হ্যাঁ, ৩০ তারিখের ওই আন্দোলনে আমি থাকছি। তবে আমার ওই দিনই চট্টগ্রামে ছুটে যেতে হবে। একটা নাচের শো রয়েছে। একটা সময়ে টিভিপর্দায় হরহামেশাই নাচের অনুষ্ঠান প্রচার হতো। সে জায়গা থেকে টিভি চ্যানেলগুলো অনেকটাই সরে এসেছে। যে কারণে অনেক পেশাদার নৃত্যশিল্পী বঞ্ছিত হচ্ছেন। শিল্পের জায়গাটা অনেকটাই নষ্ট হচ্ছে বলে তাদের ধারণা। অভিনয়ের পাশাপাশি একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে এ ব্যাপারে কি ভাবছেন নাদিয়া? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে টিভি চ্যানেলের নৃত্যানুষ্ঠানে মূলধারার নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে আয়োজন খুব কম হয়। এ বিষয়ে টিভি চ্যানেলগুলোর খুব একটা আগ্রহ কাজ করে না বললেই চলে। এ নিয়ে অনেক আগে থেকেই আমি বেশ আপসেট। ছোট বেলা থেকে শিখে আসা নাচ। এখন সেটার অবস্থা বেহাল। দর্শক প্রকৃত নাচের শিল্পীদের দেখতে পারছেন না। এখন টিভিতে বিশেষ দিন ছাড়া তেমন নাচের অনুষ্ঠান প্রচার হয় না বললেই চলে। সবমিলিয়ে বলবো প্রকৃত নাচের শিল্পীরা এখন বঞ্চিত হচ্ছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.