আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কী হবে তার প্রথম ২০০ দিনের কাজ? ট্রাম্পের পরামর্শক, উপদেষ্টারা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর তার প্রথম ২০০ দিনের কর্মপরিকল্পনার প্রথম দিকেই রেখেছেন দেশের বাণিজ্যিক সংস্কারকে।
ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ট্রাম্পের অন্তর্বর্তীকালীন সহায়তাকারী দল বা ট্রানজিশন টিমের তৈরি একটি খসড়া নীতিমালায় এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে সিএনএন।
সিএনএন জানায়, খসড়া দলিলটি ট্রাম্পের প্রথম ২০০ দিনের বাণিজ্য নীতিমালার একটি কাঠামো। এতে নর্থ আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে পুনরায় আলোচনা, এমনকি প্রয়োজনে সেখান থেকে বেরিয়ে আসাসহ আরও বেশ কিছু মূলনীতির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এই বাণিজ্যিক সংস্কার সম্পর্কে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময় বেশ কয়েকবার অঙ্গীকার করেছেন। তবে ওই খসড়াটিতেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, আগামী বছর ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে এই পরিকল্পনার অনেক কিছুই বদলানো হতে পারে। সেখানে লেখা আছে ‘শুধু আলোচনার জন্য’।
এই খসড়া পরিবর্তনশীল হলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখান থেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রাম্প প্রশাসনকে সাজানোর একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছে ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিম।
আমেরিকা ফার্স্ট : নির্বাচনে প্রচারের সময় ট্রাম্প মানুষের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা অবশ্যই পূরণ করা হবে। পরিকল্পনার কাগজে তাই লেখা। এসব প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্যই কাজ করবে ট্রাম্প প্রশাসন। আর ওই শক্তি, সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা দিয়েই দল গঠন করবেন ট্রাম্প। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়েই কাজ শুরু করবে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন চুক্তি হবে অন্য দেশের সঙ্গে তবে এতে প্রাধান্য পাবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো। যাই হবে তা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে।
পাঁচটি ইস্যু : ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম ২০০ দিনের পরিকল্পনা করা হয়েছে পাঁচটি ইস্যুকে ঘিরে। এগুলো হচ্ছে, উত্তর আমেরিকান মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে (নাফটা) থাকা বা না থাকা, ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের চুক্তি, ‘অনৈতিক আমদানি’ বন্ধ করা, ‘অনৈতিক বাণিজ্য’ বন্ধ করা এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির দিকে জোর দেয়া। সঙ্গে আরও একটি বিষয় আছে সেটি কর্মসংস্থান বিষয়ক। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের প্রাধান্য পাবে। আর এ ক্ষেত্রে আলোচিত হবে ব্যবসা সংক্রান্ত কর কমানো, ব্যবসায় শর্ত কমানো এবং অভ্যন্তরীণ শক্তিসম্পদে নিয়ন্ত্রণ রাখা।
নাফটা নিয়ে নতুন চিন্তা : নাফটার বিরোধিতা ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের সময়ই করেছেন। মেক্সিকো, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র- এ তিনটি দেশ নব্বইয়ের দশকে মুক্তবাণিজ্য সংক্রান্ত এ চুক্তি করে। ১৯৯৪ সাল থেকে এ চুক্তির কার্যকারিতা শুরু হয়। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এ চুক্তি তিনি বাতিল করবেন। এতে তিন দেশের মধ্যে পণ্যসহ অনেক সেবার আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যাবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী নাফটাতে সংস্কার আনবেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে অন্য দুই দেশকে প্রস্তাব দেবে চুক্তিতে সংশোধনী আনার। অর্থ সংক্রান্ত বিষয়, পরিবেশ, নিরাপত্তা মানসহ বিভিন্ন বিষয় এতে প্রাধান্য পেতে পারে।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্য দুই দেশের সঙ্গে ‘ক্ষতিকর’ কিছু হয় কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে ট্রাম্প প্রশাসন। বাণিজ্যের কারণে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নজর রাখার নির্দেশ আসতে পারে প্রশাসনের কাছ থেকে। আন্তর্জাতিক কর্পোরেট আদান-প্রদানের বিষয়ের ক্ষেত্রেও পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ আসতে পারে।
ভরসা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক : নাফটা থেকে সরে গেলে সুবিধা-অসুবিধা কী হবে? ট্রাম্পের কাছে যুক্তি আছে। কথা হচ্ছে তাহলে পরে হবেটা কী? জানা যায়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিকে ঝুঁকবেন ট্রাম্প। আর এ ব্যাপারে কংগ্রেসও এগিয়ে আসবে প্রেসিডেন্টকে সাহায্য করার জন্য। এখন প্রেসিডেন্ট খুব সহজে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস এ সুবিধা দিয়ে রেখেছে। সেটা হয়তো বেড়ে ২০২১ পর্যন্ত যাবে।
নাফটা থেকে সরে আসার ব্যাপারে অনেক প্রতিবন্ধকতাও আছে। তবে তা সরিয়ে ফেলা যাবে যদি মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যায়। একই সঙ্গে চীনের প্রতি নজর থাকবে ট্রাম্প প্রশাসনের। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ব্যাপারে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.