প্রায় দুই মাস ধরে গমের আমদানি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশ্ববাজারেও এখন গত ১০ বছরের মধ্যে সাধারণ মানের গমের দাম কম। আবার দেশে চালের দাম বাড়তি থাকায় গমের চাহিদাও বাড়ছে। ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির খবর হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন ২১টি বড় আকারের জাহাজ থেকে ১১ লাখ টন গম খালাস হচ্ছে। কাস্টমসের হিসাবে, বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে এসব গমের দাম পড়েছে গড়ে কেজিপ্রতি সাড়ে ১৫ টাকা। প্রোটিনের মাত্রা অনুযায়ী মানভেদে সাড়ে ১৪ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়েছে। এসব গম দিয়ে দেশের অন্তত চার মাসের চাহিদা পূরণ হবে। কম দামে কেনায় এ সময়ে বাজারও স্থিতিশীল থাকার কথা। ভোগ্যপণ্যের দর পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালের অক্টোবরে টনপ্রতি গমের দাম ছিল ২০৫ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর গড় দাম ছিল প্রায় ১৯২ ডলার। ইনডেক্স মুন্ডির গত বুধবারের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ মানের গম এখন টনপ্রতি ১৪৪ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে। এই গম দেশে আনতে পরিবহন খরচ যোগ হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন কম প্রোটিনযুক্ত সাধারণ মানের গম আমদানিতে বন্দর পর্যন্ত খরচ পড়ছে ১৯৫ থেকে ২০৫ ডলার। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত গম আমদানিতে খরচ ২৬০ থেকে ২৬৫ ডলার। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, এ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন গম খালাসের ছাড়পত্র দিয়েছে কাস্টমস। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৯০ হাজার টন। গম আমদানি বেড়েছে ১০৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কম-বেশি ৯১ শতাংশ গম আমদানি হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত অর্থবছরে দেশে সরকারি-বেসরকারি খাতে গম আমদানি হয়েছিল ৪৩ লাখ ৬৬ হাজার টন। উৎপাদন হয় সাড়ে ১৩ লাখ টন। হঠাৎ করেই একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ গম আমদানির অনেকগুলো কারণ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, সরকারি খাতে গম আমদানি কমে ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে। নতুন করে এ খাতে যুক্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আবার আটা-ময়দা তৈরির কয়েকটি কারখানাও চালু হয়েছে। শহরে বেকারি পণ্যের নতুন নতুন আধুনিক কারখানা হচ্ছে। আবার মোটা চাল এখন ৩৯ থেকে ৪০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা আটার দাম এর চেয়ে ৪০ শতাংশ কমে ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দামের এই ব্যবধানের কারণেও গরিব মানুষের কাছে গমের ব্যবহার বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা এসব বিষয় পর্যালোচনা করে আমদানিও বাড়িয়েছেন। গম আমদানিকারক ও বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ফলন ভালো হওয়ায় বিশ্ববাজারে গত ১০ বছরের মধ্যে গমের দাম কম। ভবিষ্যতে সাধারণ মানের গমের দাম স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভারত যদি গম আমদানির পরিমাণ বাড়ায়, সে ক্ষেত্রে দাম সামান্য বাড়লেও খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বছরে দেশে আমদানি করা গমের বাজারের আকার প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। এই বাজারে বড় অংশীদার হচ্ছে সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপসহ ২৮টি প্রতিষ্ঠান। এবার এই বাজারে যুক্ত হয়েছে নতুনরাও। নোয়াপাড়া ট্রেডিং, মাসুদ ফুড প্রডাক্টস, এনআর ট্রেডিং, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, ডায়মন্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, মীর ফ্লাওয়ার মিলস নামে বেশ কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠান গম আমদানি শুরু করেছে। গম বিক্রির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হচ্ছে। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেশে আমদানি হওয়া গমের ৫০ শতাংশই এসেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। কানাডা থেকে আনা হয় ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনাসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি হয় বাকি ২০ শতাংশ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.