মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করে শোনা গেল অন্য আরেকজনের কণ্ঠ। ‘একটু মোস্তাফিজকে চাচ্ছিলাম’ বলতেই কাঠখোট্টা জবাব, ‘উনি ব্যস্ত আছেন। আপনি পরে ফোন দেন।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই সাফল্যের ভেলায় ভেসেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ভেলাটাকে থামিয়ে দিল মুহূর্তেই। শুরুর রোমাঞ্চ স্থায়ী হয়নি এক বছরও। এর মধ্যেই একজন ক্রিকেটারের জীবনের বেদনার অংশটিও দেখা হয়ে গেছে তাঁর। কাঁধের চোটে পড়ে গত ১১ আগস্ট লন্ডনে শল্যবিদ অ্যান্ড্রু ওয়ালেসের ছুরির নিচে যেতে হয়েছে মোস্তাফিজকে। গত বছরের জুনে অভিষেক হয়ে মোস্তাফিজ সর্বশেষ ওয়ানডেটি খেলেছেন গত নভেম্বরে। টেস্ট সিরিজ তো খেলেছেন একটাই এবং তা-ও গত বছরের জুলাইয়ে। তাই বলে অবশ্য খুব বেশি সিরিজ মিস করতে হয়নি তাঁকে। মাঝের সময়টায় ওয়ানডে সিরিজ হয়েছে শুধু আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আর টেস্ট শুধু ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। তবে এ বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম চারটি ম্যাচ মিস করার পর শেষ তিনটিতে খেলেছেন মোস্তাফিজ। এরপর সাসেক্সের হয়ে ইংলিশ কাউন্টি খেলতে গিয়েই পড়লেন চোটে। মোস্তাফিজের মাঠে ফেরার অপেক্ষা সেই থেকে। অস্ত্রোপচারের পর বিসিবির ফিজিও-চিকিত্সক ও বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মিরপুরের জিমনেসিয়াম আর ইনডোরে। একাডেমি ভবনই এখন তাঁর ঠিকানা। তবে এ মুহূর্তে মোস্তাফিজ ছুটি কাটাচ্ছেন সাতক্ষীরার বাড়িতে। বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সেখানে একটু ব্যস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে পাঁচ দিনের এই ছুটিও প্রায় শেষ। মোস্তাফিজ ঢাকায় ফিরে আসবেন আগামীকাল। পরশু থেকে আবারও নামবেন অনুশীলনে। মোস্তাফিজের মাঠে ফেরার লড়াইয়ের এই অংশটাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিসিবির চিকিত্সক দেবাশিস চৌধুরী, ‘ছুটিতে যাওয়ার আগের অনুশীলনে ও সর্বোচ্চ ৫০ ভাগ দিয়ে বোলিং করেছে। বল করেছে শর্ট রানআপে। এবার আমরা ওর ওপর চাপটা একটু একটু করে বাড়াব। তখনই কাঁধের আসল অবস্থাটা বোঝা যাবে।’ সেটা কেমন হয়, তার ওপরই নির্ভর করছে নিউজিল্যান্ড সফরে মোস্তাফিজ খেলবেন কি না। খেললে পুরো সিরিজই খেলবেন, নাকি অংশবিশেষ। ‘নিউজিল্যান্ডে সে খেলতে পারবে কি না, বা কতুটুক খেলবে, এসব এত আগে বলা কঠিন। তবে এখন পর্যন্ত যেভাবে উন্নতি হয়েছে, তাতে তত দিনে খেলার মতো অবস্থায় চলে আসার কথা। এটা পুরোপুরি বোঝা যাবে মোস্তাফিজ পুরো শক্তিতে বোলিং শুরু করার পর’—বলেছেন দেবাশিস।
আশার কথা, অস্ত্রোপচারের পর পাঁচ-ছয় মাস বাইরে থাকতে হতে পারে বলা হলেও মোস্তাফিজ হয়তো তার আগেই মাঠে ফিরতে পারবেন। অস্ত্রোপচারের জায়গায় এখন পর্যন্ত আর কোনো সমস্যা না হওয়াতেই এই আশা। বিসিবির চিকিত্সক জানিয়েছেন, পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া এভাবেই এগোতে থাকলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নেটে পুরো গতিতে বল করতে পারবেন বাঁহাতি এই পেসার। এই পরীক্ষাটা সাফল্যের সঙ্গে উতরাতে পারলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মোস্তাফিজকে নিউজিল্যান্ডে খেলানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।
ডিসেম্বর-জানুয়ারির নিউজিল্যান্ড সফরের প্রাথমিক দলে তিনি আগে থেকেই আছেন। বিসিবির ফিজিও-চিকিত্সকদের পরামর্শ, মোস্তাফিজকে নিয়ে যাওয়া হোক অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রস্তুতি ক্যাম্পেও। জাতীয় দলের সঙ্গে থাকলে পুনর্বাসন ও অনুশীলন দুটোই হবে আরও ভালো।
বিপিএল শেষে আগামী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর দুই ভাগে ভাগ হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাবে বাংলাদেশ দল। সিডনিতে অনুশীলন ক্যাম্প শেষে নিউজিল্যান্ড যাওয়ার কথা ১৯ ডিসেম্বর। ক্রাইস্টচার্চে ওয়ানডে দিয়ে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হবে সিরিজ। তার আগে ২২ ডিসেম্বর হবে একমাত্র অনুশীলন ম্যাচটি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.