‘সারাদিন পরিশ্রম করি, রাতে ঘুমাতে পারি না। তাহিয়া শুধু কান্নাকাটি করে। তার চিৎকার দিয়ে কান্নায় বারবার ঘুম ভেঙে যায়। আমার বউ মেয়ের এমন কান্নার পরও শুধু ঘুমায়। আমি প্রতিদিন তার কান্নায় বিরক্ত হই। গত কয়েকদিন থেকে তাহিয়া অসুস্থ। তার মুখে ঘা থাকায় কিছু খেতে পারে না। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতো। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কোনো অবস্থায়ই তাহিয়ার কান্না থামানো যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে তার মা রহিমার কাছ থেকে তাহিয়াকে কোলে নিয়ে আমিও ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করি। তবুও কান্না না থামায় বিরক্ত হয়ে তাকে ধমক দেই, থাপ্পড় মারি। তখন ওর মা কোলে নিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। রাত তিনটার পৃষ্ঠা ৯ কলাম ১ দিকে মায়ের বুকের দুধ খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়লে মাও ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরের দিকে মেয়েটি আবার কান্নাকাটি শুরু করলে চরম রাগ ওঠে। একপর্যায়ে ঘুমন্ত রহিমার পাশ থেকে তাহিয়াকে কোলে নিয়ে পুকুরের পানিতে ছুঁড়ে ফেলি।’-এভাবে নিজের ছয়মাস বয়সী কন্যা শিশুকে হত্যার কথা পুলিশ ও আদালতের কাছে অকপটে স্বীকার করেন বাবা উজ্জ্বল আহমদ। বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে। ঘাতক বাবা গ্রামের শামসুল ইসলামের পুত্র। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার ভোরে ভাসমান অবস্থায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। আইনি জটিলতা এড়াতে মেয়ে হন্তারক বাবা থানায় এসে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ছয় মাসের শিশুর পুকুরে ডুবে নিহত হওয়ার বিষয়টি পুলিশের সন্দেহ হলে তারা ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। তাহিয়া নিহতের ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবা উজ্জ্বল আহমদ এবং মা রহিমা বেগমকে আটক করে। সেখানে পুলিশের কাছে বাবা মেয়ে হত্যার ঘটনার বিশদ বিবরণ দেন। গতকাল সিলেটের আদালতেও মেয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অপু কুমার দাস গুপ্ত। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মা রহিমা বেগম জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম ভাঙলে তাহিয়াকে কাছে না দেখে উজ্জ্বলকে জিজ্ঞাসা করি। তখন উজ্জ্বল ঘরের ভেতর পায়চারি করছিল। রহিমা বলেন, তাকে মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি পানিতে ফেলে দেয়ার কথা বলেন। প্রথমে তার কথা বিশ্বাস না হলেও পরে পুকুরে গিয়ে সত্যি লাশ ভাসতে দেখি। এ ঘটনায় নিহত শিশু তাহিয়ার মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, শনিবার রাতে তাহিয়ার মা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আদালতে ঘাতক হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, নিজ ভাইয়ের গ্রিল ওয়ার্কশপের ব্যবসা পরিচালনা করতেন উজ্জ্বল আহমদ। প্রায় বছরখানেক আগে তার ভাই ইউরোপে যাওয়ার জন্য ভারত গেলে সেখানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে ভাই ভারতের কারাগারে আটক আছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.