ভারতের কানপুরে একটি ট্রেনের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে কমপক্ষে ১১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কানপুর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে পুখরায়ানের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় পাটনা থেকে ইন্দোরে যাচ্ছিল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি, বেসরকারি ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয়ভাবে এই দুর্ঘটনা তদন্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সরকারের পক্ষ থেকে এ দুর্ঘটনার কোনো কারণ এখনো জানানো হয়নি। তবে রেললাইনের কোনো ত্রুটির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, জি নিউজ, বিবিসি। খবরে বলা হয়, শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঘটে দুর্ঘটনা। ট্রেনের বেশিরভাগ যাত্রীই তখন ছিলেন গভীর ঘুমে। তাৎক্ষণিকভাবে চারটি বগি মারাত্মকভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ওই বগিগুলোতে আটকা ছিলেন শতাধিক যাত্রী। দুর্ঘটনাস্থলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহত ও আহতদের রক্তে সয়লাব চারদিক। তার মধ্যে এখানে-ওখানে পড়ে ছিল তাদের ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। সকালে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যান স্থানীয় লোকজন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন। কানপুরের আইজি জাকির আহমেদ বার্তা সংস্থা এএনআই’কে বলেছেন, নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। রেল কর্মকর্তারা বলছেন উদ্ধার অভিযান চলছে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইজি জাকির আহমেদ বলেছেন, দেড় শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব হাসপাতালকে সতর্ক করা হয়েছে। কমপক্ষে ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে। আড়াই শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়েছেন। রেল মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনীল সাক্সেনা বলেছেন, আহত কিছু মানুষকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা বলেছেন, বগিগুলোতে আটকা পড়াদের উদ্ধার করাই তাদের প্রধান কাজ। এখনও অনেক শিশু ও নারীর গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তারা জীবিত রয়েছেন। তাদের উদ্ধার করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। নর্দান সেন্ট্রাল রেলওয়ের মুখপাত্র বিজয় কুমার বলেছেন, চিকিৎসক ও রেলওয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র বলেছেন, দুর্ঘটনার প্রকৃতি ও সময় দেখে মনে হচ্ছে রেললাইনের ত্রুটির কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। তবে অনুসন্ধানের পর এর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ওদিকে ট্রেনটির আরোহীরা যাতে তাদের গন্তব্যে সময় মতো পৌঁছাতে পারেন সে জন্য প্রেষণে ব্যবহার করা হচ্ছে বাস। বিজয় কুমার বলেছেন, এ দুর্ঘটনায় এস ২ বগিটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারটি এসি বগিও লাইনচ্যুত হয়েছে। এ সংক্রান্ত সহায়তার জন্য রেলওয়ে বেশ কয়েকটি হেলপলাইন খুলেছে। জরুরি প্রয়োজনে এসব নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি টুইটে বলেছেন, পাটনা-ইন্দোর এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে যেসব প্রাণহানি ঘটেছে তার বেদনা জানানোর ভাষা নেই। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা। যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য আমার প্রার্থনা। আমি এরই মধ্যে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ওদিকে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু তার টুইটে বলেছেন, এরই মধ্যে এ দুর্ঘটনা তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা এতে দায়ী বলে বিবেচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তিনি টুইটে বলেছেন, সিনিয়র কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় এমপিরা, এমএলএসহ অন্যরা দ্রুততার সঙ্গে ছুটে গেছেন ঘটনাস্থলে। যেসব যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। ক্ষতিপূরণ পাবেন আহতরাও। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেককে ৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিহতদের জন্য ২ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। রেলমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিহতদের জন্য আরো ২ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া উত্তর প্রদেশ সরকার মারাত্মক আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ও অল্প আহতদের ২৫ হাজার রুপি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও নিহতদের জন্য ২ লাখ রুপি ও আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.