‘গণধর্ষণ করে ক্ষান্ত হয়নি মিয়ানমারের সৈন্যরা। আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে অবুঝ দুই সন্তানকে। আর বেঁচে থাকা একমাত্র সন্তানটিকে নিয়ে পালিয়ে আসার সময় মায়ের কোলেই মারা গেল শিশুটি।’
গতকাল শনিবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফে মৃত সন্তানটি নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় খুঁজেও জায়গা মিলে না নূর বেগমের। নূর বেগমের তিন সন্তান ছিল। জাফর আলম (৩), মো. হাসিম (৫) ও জানে আলম (সাড়ে ৫ মাস)। তিনি মংডুর জাম্বুনিয়ায় গ্রামের জামাল হোসেনে স্ত্রী।
নূর বেগম বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমণ করে গত সোমবার রাতে। শুরুতেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান তার স্বামী। সেনাবাহিনী ঢুকে বাড়িতে। বন্দী করে সবাইকে। তারপর দুই ছেলেকে তার সামনে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। এরপর সে ছোট শিশু জানে আলমকে নিয়ে নানার বাড়ি গুলজারের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেও বাঁচতে পারলেন না। ওখানে হামলা চালায় সৈন্যরা। পাশের অপর বাড়ির লোকসহ তাদের পরিবারের প্রায় ৩০ জন পুরুষকে এক সাথে বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এমন কথা বলার পর তার দুই চোখে কান্না চলে আসে।
তিনি বলেন, এমন হতভাগ্য কয়জন মা আছে যে, নিজের চোখের সামনে সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসময় তিনি তার ছোট ছেলেসহ আরো ২০ জন বাংলাদেশে পালিয়ে আসার জন্য মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর ৬ দিন জীবন যাপন করে। তখন তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছিল। এসময় তার ছোট ছেলে জানে আলম অসুস্থ হয়ে পড়ে। শনিবার ভোরে নাফনদী পার হয়ে ২০ জন মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে ঢোকে। পরে আশ্রয় খোঁজে টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এদিক ওদিক ছুটে। এসময় নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা দিলদার বেগম তাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেন। পরে সকালে জানতে পারেন- নূর বেগম তার বুকের ধন আর বেঁচে নেই! তার কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে ওঠে।
গত ৯ অক্টোবর থেকে নতুন করে থেমে থেমে জঙ্গি নিধনের নামে নির্বিচারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যার অভিযোগ উঠছে। গত এক মাসে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে বাস্তুহারা করা হয় অন্তত ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে।
উখিয়ার বৌদ্ধ মন্দির পল্লীতে নিরাপত্তা জোরদার
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, উখিয়ার বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ পল্লীতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে উখিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছেন।
সীমান্তের ওপার থেকে পালিয়ে আসা ফাতেমা বেগম (২৫) জানায়, তার স্বামী বাড়ির পার্শ্বে ধান কাটছিল। এসময় সেনাবাহিনী ও রাখাইন সদস্যের একটি দল তাকে ধরে নিয়ে যায়। আগুন দিয়ে বাড়িটি পুড়ে ফেলে। কিছু নেওয়ার মতো পরিবেশ ছিল না। দুইটি সন্তানকে বুকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলছেন, এখানে মরলেও শান্তি পাব। খেয়ারীপাড়ার আব্দুল হামিদ (২৬) জানান, “ঘরে আগুন দিয়ে পুড়ে দেওয়ার সময় তার চোখের সামনে বয়োবৃদ্ধ পিতা শফিউল্লাহ (৫৫) মারা যায়। বাবার লাশ ফেলে মাকে নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে পৌঁছতে তাকে দেড় লাখ (কিয়াত) সেখানকার দালালকে দিতে হয়েছে।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ফাঁক-ফোকর দিয়ে আসা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের জানান, বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ পল্লীতে যেন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন কর্মকর্তারা।