গত আট বছরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ৮৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫০ টাকার সম্পদ বেড়েছে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে নিজের সম্পদের বিবরণ দেন অর্থমন্ত্রী। সেখানেই এই তথ্য দেন তিনি। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রিটার্ন দাখিল শেষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৮ সালের ৩০শে জুন দায়িত্ব নেয়ার সময় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬ টাকা। আর চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৯৮ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা। অর্থাৎ এই আট বছরে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকার। তিনি বলেন, এই সম্পদের বড় একটি অংশ বিদেশে থাকতে অর্জন করেছি, যা করযোগ্য নয় (করের আওতায় পড়ে না)। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত আট বছরে তিনি আয় করেছেন তিন কোটি তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৪০ টাকা। এ ছাড়া গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আয় ছিল ৩৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে করযোগ্য আয় ২০ লাখ ৯১ হাজার এবং করযোগ্য নয় এমন আয় ১৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এই আয়ের ওপর ভিত্তি করে তিনি এ বছর দুই লাখ ১২ হাজার ৬১১ টাকা আয়কর দিয়েছেন। ক্ষমতায় গেলে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করবে বলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। এক প্রশ্নে জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্পদ ও আয়কর ইত্যাদি খুবই ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ চাইলে তা নিজে প্রকাশ করতে পারেন। আমি কাউকে আহ্বান করতে পারি না। ট্যাক্স আইন অনুসারেও পারি না। তা ছাড়া প্রত্যেক মন্ত্রী প্রতি বছরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের সম্পদের হিসাব দিয়ে থাকেন বলেও জানান তিনি। ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের জন্য ৩০শে নভেম্বর আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এরপর আর সময় বাড়ানো হবে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে একটি নির্দিষ্ট তারিখে আয়কর দিবস পালন করা হয়। যার পরে আর রিটার্ন দাখিল করা যায় না। আমরাও এবার এ ধরনের দিবস চালু করলাম। আশা করি পরবর্তী সরকারগুলোও এটি বজায় রাখবেন। তিনি অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সুবিধাদি বর্ণনা করে বলেন, এতদিন সম্পদ হিসাব করে করদাতাদের করের পরিমাণ বের করার ঝামেলা পোহাতে হতো। এখন আর ঝামেলা থাকবে না। অনলাইনে সম্পদের বিবরণ দিলেই সফটওয়্যার করের হিসাব করে ফেলতে পারবে। এতে করদাতারা হয়রানি ও ঝামেলামুক্ত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। মুহিত বলেন, তরুণ প্রজন্ম কর প্রদানে উৎসাহিত হচ্ছেন। এবারের মেলায় এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এখন আমরা বিভিন্নভাবে দেশবাসীকে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে পরিচালনা পর্ষদে দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো অনিয়ম দেখা দিলে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে অনিয়মের কারণে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থানা পরিচালকদের বরখাস্ত করার মতো ঘটনা ঘটেছে। চলমান অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের হার সম্পর্কে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায়ের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৭ শতাংশ। আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট তিন বিভাগেই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাংলাদেশে করদাতার সংখ্যা এ বছর ২৫ লাখে উন্নীত করতে চান এনবিআর চেয়ারম্যান। নিজের সাম্প্রতিক ভিয়েতনাম সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেখানে যাওয়ার পর বুঝতে পারি, আমাদেরকে আরো অনেক দূর যেতে হবে। সেখানে ৯১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৪৯ মিলিয়ন কর দেয়। ৯ই ডিসেম্বর থেকে ভ্যাট সপ্তাহ পালন করা হবে বলেও জানান তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.