সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান এবং একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবুর বিরুদ্ধে চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের করা ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত মিডিয়া ইউনিটির সংহতি সমাবেশে এই তথ্য জানান মিডিয়া ইউনিটির উপদেষ্টা ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। ওই সভায় সব দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন ফরিদুর রেজা সাগর ও ড. মাহফুজুর রহমান। গত ১৩ই নভেম্বর সংগঠনটির এক সমাবেশে ফরিদুর রেজা সাগরকে উদ্দেশ্য করে কটু মন্তব্য করেছেন মাহফুজুর রহমান। তারই সূত্র ধরে গত ২৯শে নভেম্বর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন চ্যানেল আই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এরই মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন ফরিদুর রেজা সাগর। সে সঙ্গে দুই চ্যানেল প্রধান ও একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল হক বাবু পরস্পরের সঙ্গে সমাবেশ শেষে হাতে হাত রেখে সব দ্বন্দ্ব ভুলে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এদিকে গতকাল সমাবেশের শুরুতেই এত দিন ধরে চলে আসা আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করাসহ বেশকিছু দাবি নিয়ে মিডিয়া ইউনিটি গত এক মাস ধরে সমাবেশ ও আন্দোলন করে আসছে। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুক্রবার রাত ১১টা ১ মিনিট থেকে বিদেশি চ্যানেলে দেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শুক্রবার রাত ১১টা ১ মিনিট থেকে সব দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলগুলোতে প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। মিডিয়া ইউনিটির এতদিনের আন্দোলন সফল হয়েছে। সে সঙ্গে আন্দোলন ও সংহতি সমাবেশকে কেন্দ্র করে এর মধ্যে যেসব বিতর্ক এবং ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে সেটারও সমাধান হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশি পণ্যের প্রচারের ফলে গত দুই বছরে ৪০০ কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যায়। এতে বিপাকে পড়েন দেশীয় ২৭টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিডিয়া ইউনিটি আগে তিনটি সমাবেশ করে। তৃতীয় সমাবেশে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও উপস্থিত ছিলেন। দুই মন্ত্রীর মাধ্যমে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে গেলে তিনি তাৎক্ষণিক এই সিদ্ধান্ত নেন। বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের নির্দেশ পাওয়ায় আনন্দিত মিডিয়া ইউনিটির সবাই। সে সঙ্গে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত সব সদস্য এবং উপদেষ্টামণ্ডলীকে। দুপুরে অনুষ্ঠানের শুরুতেই মিডিয়া ইউনিটির আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, মিডিয়া ইউনিটির কয়েক দফা দাবির মধ্যে অন্যতম একটি পূরণ হয়েছে। আমাদের আন্দোলনও সফল হয়েছে। এদিকে এ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি বলেন, জীবনে একটাই মামলা করলাম আর সেটাই প্রত্যাহার করতে হচ্ছে। মামলাটি করার পর দুদিন গেল সাপ্তাহিক ছুটিতে। আর এ ছুটির মধ্যেই প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আসলে গত ১৩ই নভেম্বরের ওই সমাবেশে যদি আমাদের ডাকা হতো তাহলে হয়তো এত দূর গড়াতো না। যাই হোক। সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মামলাটির প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চ্যানেল আই সবসময় সবার সঙ্গে ছিল আগামীতেও থাকবে। ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, সেদিন সমাবেশে আমার বক্তব্য না বুঝেই মামলা করে দেন। যা-ই হোক। এখন আমরা আজ এক হয়েছি। আজ থেকে আমরা যারা মিডিয়া ইউনিটির সদস্য আছি, কেউ কারো বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করবো না। বিষয়টি আমাদের মধ্যেই থাকবে। কোনো প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না। এতদিন আমাদের কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এখন মিডিয়া ইউনিটি হয়েছে। সবাই একসঙ্গে কাজ করবো। মিডিয়া ইউনিটির সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও বিশিষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। এছাড়া অন্যান্য টিভি চ্যানেল মালিক, ব্যবস্থাপক ও অনুষ্ঠান প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। এসএটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন অর রশিদ, এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন ফালু, চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান, শাইখ সিরাজ, বিশিষ্ট সংবাদ বিশ্লেষক নাঈমুল ইসলাম খান, গান বাংলা চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কৌশিক হোসেন তাপস, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ, নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, দেশটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিডিয়া ইউনিটির সদস্য সচিব আরিফ হাসান, একুশে টিভির অনুষ্ঠান প্রধান ফারহানা নিশো, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত, সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলীক, প্রোগ্রাম প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনসের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার পাঠানসহ আরও অনেকে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.