যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া থেকে আনা লুই আই কানের তৈরি জাতীয় সংসদের মূল নকশা শিগগিরই পাঠানো হবে জাতীয় আর্কাইভে। বর্তমানে এটা সংসদ সচিবালয়ে সংরক্ষিত আছে। জাতীয় আর্কাইভে সর্বসাধারণের জন্য তা খুলে রাখা হবে। একই সঙ্গে মূল নকশার আরেকটি কপি পাঠানো হবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। নকশা অনুযায়ী সংসদ সচিবালয়ের কাজ বাস্তবায়ন করতেই মন্ত্রণালয়কে দেয়া হবে। তবে মূল নকশার কপি সংরক্ষিত থাকবে সংসদ সচিবালয়ে। স্পিকারের একান্ত সচিব মো. কামাল বিল্লাহ গতকাল মানবজমিনকে এসব তথ্য জানান। গত ১লা ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে নকশার কপি সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছায়। ওই দিন রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, লুই আই কানের নকশা দেশে আসার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হয়েছে । নকশা বিশারদদের একটি টিম শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীকে নকশার বিস্তারিত জানাবে। এরপরই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এর আগে সংসদের মূল নকশা সংগ্রহ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রথম থেকে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে টানাপড়েন চলে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের দাবি ছিল চাহিদা অনুযায়ী লুই আই কান পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করেননি। অন্যদিকে লুই আই কানের প্রতিষ্ঠানের দাবি বাংলাদেশ যে পরিমাণ টাকা দেয়ার কথা ছিল তা পরিশোধ করেনি। পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে নকশাগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। পেনসিলভেনিয়া কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের কাছে পুরনো বকেয়া হিসেবে প্রায় এক কোটি টাকা দাবি করে। পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে বাংলাদেশ। এ নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে চলে রশি টানাটানি। শেষ পর্যন্ত ৬১ হাজার ডলারে রফা হয়। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ লাখ। পরে বাংলাদেশ ওই টাকা পরিশোধ করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে নকশার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বকেয়া পাওনা পরিশোধের পর পেনসিলভেনিয়া কর্তৃপক্ষ মূল নকশা দিতে রাজি হয়। গত ৬ই জুন সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পেনসিলভেনিয়া যান। তার সঙ্গে ছিলেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন শাখা-৯) অধিশাখা মো. মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব, স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি সাইকা বিনতে আলম। এর আগে বিষয়টি নিয়ে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ৫ জন যান নকশা নির্ধারণ করতে। কারণ সংসদ ভবন ঘিরে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ৮০০০ নকশা। এর মধ্যে ৯শ’র মতো নকশা চূড়ান্ত করে তারা। স্থাপত্য অধিদপ্তরের পরামর্শে এসব নকশা চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৪ সালের ১লা জুন নকশা সংগ্রহে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও এ নিয়ে উদ্যোগ নেন। তিনি নির্দেশ দেন তখনকার সংসদ সচিব আশরাফুল মকবুলকে। এরপরই সচিব বৈঠক করেন স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ও গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে। ঘোষণা দেন নকশা দেশে আনতে লুই ইসাডোর কানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে একটি টিম যাবে বিদেশে। একই বছরের ২৭শে মে আবারও বৈঠক হয় সংসদ কমিশনের। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আগের কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি জানতে চান। এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রী নকশা সংগ্রহের বিষয়টি জানতে চান। তবে কোনো জবাব দিতে পারেনি সংসদ সচিবালয়। পরে প্রধানমন্ত্রী আবারও নির্দেশ দেন নকশা সংগ্রহের। এসময় সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, টাকার অভাবে নকশা আনা সম্ভব হচ্ছে না। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, যত টাকা লাগে তা দেয়া হবে। তারপরও মূল নকশা দেশে আনতে হবে। মূলত এরপরই নড়েচড়ে বসে সংসদ সচিবালয়। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘদিন পর ১৯৮২ সালের ২৮শে জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.