ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় ভোরে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সামরিক বাহিনী গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেন, ভূমিকম্পে প্রায় ২০০ বাড়ি ও দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৪টি মসজিদ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি করে হাসপাতাল ও স্কুলও। আচেহর অবস্থান সুমাত্রা দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে। ভূমিকম্প আঘাত হানে মূলত সেখানকার পিদি জায়া এলাকায়। এলাকাটি মুসলিমপ্রধান। ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় অনেক মুসল্লি ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পিদি জায়ার বহু বাসিন্দা উদ্বাস্তু অবস্থায় আছেন। তাঁদের বেশির ভাগই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে খাদ্য ও পানির প্রচণ্ড অভাব দেখা দিয়েছে। স্থানীয় দুর্যোগ সংস্থার প্রধান পুতেহ মানাফ বলেন, পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কিছু এলাকায় জেনারেটর চলছে, তবে তা সংখ্যায় নগন্য। এখন বৃষ্টি শুরু হলে অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। আচেহ প্রদেশের সামরিক প্রধান তাতাং সুলাইমান গতকাল বিকেলে বলেন, উদ্ধারকাজে ১ হাজারের বেশি সেনা ও ৯০০ পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৯৭। তবে উদ্ধারকাজ যত এগোচ্ছে, এই সংখ্যা ততই বেড়ে চলেছে। ধ্বংসস্তূপ সরালেই কখনো ৫টি, কখনো ১০টি করে মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। পিদি জায়া জেলার সোল হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সেখানে অনেক রোগীকে মাঠে ঘাসের ওপর শুইয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অনেককে পাশের জেলার হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। জেলার স্বাস্থ্যবিষয়ক কার্যালয়ের প্রধান সাঈদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘ভূমিকম্প হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০০ আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তবে পরাঘাতের ভয়ে অনেকেই হাসপাতালের ভবনে ঢুকতে চাননি। এ জন্য আমরা হাসপাতালের বাইরেই তাঁদের চিকিৎসা দিচ্ছি।’ ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরুউদু শহর। সেখানকার বাসিন্দা হাসবি জায়া তাঁর দুই সন্তানকে ধ্বংসস্তূপ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূমিকম্পের সময় হুড়োহুড়ি করে বের হয়েছি। পরে দেখি চারপাশের সব বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।’ ২০০৪ সালে সাগরের তলদেশে ভূমিকম্পের পর আচেহ প্রদেশে সুনামি আঘাত হেনেছিল। সেবার শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর পুরো অঞ্চলে মোট মারা যায় দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ। ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। ২০০৫ সালের ২৮ মার্চ সুমাত্রায় ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে নয় শতাধিক লোক মারা যায়। ২০০৬ সালে দুই দফা ভূমিকম্পে অন্তত ১২০০ লোক মারা যায়। এ ছাড়া ২০০৯ ও ২০১০ সালেও দেশটিতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়। তবে গতকালের ভূমিকম্পের পর কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি। কিন্তু আচেহ প্রদেশের বেশির ভাগ এলাকায় বেশ কয়েকটি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.