রোহিঙ্গা মুসলিম-অধ্যুষিত মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যেতে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নতুন করে নির্মম দমন-পীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ আহ্বান জানিয়েছেন। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি সরকারি এ নির্যাতন বন্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। নিউইয়র্কে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ পরামর্শক বিজয় নাম্বিয়ার সু চির প্রতি সরাসরি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযান শুরু করায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। সু চিকে বলছি, মংডু এবং বুথিডংয়ে গিয়ে সেখানকার বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।’ রাখাইনের ওই দুই এলাকা বর্তমানে অবরোধ করে রেখেছে সেনাবাহিনী। একাধিক পুলিশ ফাঁড়িতে গত অক্টোবরে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে। তারপর থেকেই দেশটির বঞ্চিত, নিগৃহীত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ঢালাও হামলা, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে সেনাবাহিনী। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচার হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সু চি দাবি করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘নেতিবাচক কথা না বলে’ শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে সহযোগিতার অনুরোধ জানান তিনি। ইন্দোনেশীয় নেতার সঙ্গে আনানের আলোচনা: মিয়ানমারের সরকার নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিশনের প্রধান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান গত বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে রাখাইনের মানবিক সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন। সম্প্রতি দ্বিতীয় দফা রাখাইন এলাকা পরিদর্শন করেন আনান। বালি ডেমোক্রেসি ফোরামের দুই দিনের সম্মেলনের এক ফাঁকে তিনি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাখাইনের সমস্যা নিরসনে করণীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয় বলে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনতারা জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে চায় ১৪টি দেশ: রাখাইন রাজ্যে মানবিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর সুযোগ দিতে ১৪টি দেশ মিয়ানমারের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘মিয়ানমারের বন্ধু হিসেবে আমরা সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশটিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ পাঠানো প্রয়োজন, তবে সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আস্থা ফিরে পাওয়াটাও জরুরি।’ জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বেসামরিক লোকজন দুই মাস ধরে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও খাবার পাচ্ছে না। সেখান থেকে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম গত ১ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে চলে গেছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা কার্যত দেশহীন জনগোষ্ঠী। সরকার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। অধিকারকর্মীরা বলছেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে গত ৯ অক্টোবর থেকে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। ওই দিন নয়টি পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সন্দেহভাজন আসামি ধরতে রোহিঙ্গা বসতি এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। সেখানে সাংবাদিক, কূটনীতিক ও ত্রাণকর্মীদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছে মিয়ানমারের সরকার।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.