নতুন ঠিকানায় বাঘ আর বাঘিনী। বিমানে চড়ে ঢাকা হয়ে সোজা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। পেছনে আফ্রিকার সেই গহিন জঙ্গল। বাংলাদেশই এখন তাদের পরবর্তী ঠিকানা। বেলুন আর ফুলের ছড়াছড়ি দেখে কখনো হুঙ্কার। বুঝতে বাকি নেই চমৎকার এমন রাজকীয় বরণে দারুণ খুশি তারা। দিনটি ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন হওয়ায় নতুন এই বাঘজোড়া দম্পতিকে দেখতে গতকাল ভিড় জমেছিল চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক চিড়িয়াখানায়। সাজানো হয়েছিল আশপাশের পরিবেশ।বেলুন, ফেস্টুন, ব্যানার। কী ছিল না সেই আয়োজনে। বাঘের খাঁচাও সাজানো হয় আকর্ষণীয়ভাবে। চার বছর পর সাউথ আফ্রিকা থেকে আসা বাঘ-বাঘিনীকে বরণ করতেই বর্ণাঢ্য এমন আয়োজন করে বলে জানায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন পর চিড়িয়াখানায় সুদূর সাউথ আফ্রিকা থেকে দুটি বাঘ আসছে শুনে সকাল থেকেই চিড়িয়াখানায় নানাবয়সী দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. সামসুল আরেফিন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বাঘ-বাঘিনীকে চিড়িয়াখানার খাঁচায় উন্মুক্ত করেন। এই সময় নতুন অতিথিদের জন্য জ্যান্ত দুটি দেশি মুরগি ছেড়ে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে দেয়া হয় গরুর মাংসও। এতে খাঁচার ভেতরে শুরু হয় বাঘ-মুরগির মধ্যে ছোটাছুটি। বেশ কিছুক্ষণ বাঘ-বাঘিনী মুরগি শিকারের চেষ্টা করে। আর এমন ভিন্নরকম চিত্র দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন চিড়িয়াখানায় আসা দর্শনার্থীরা। একপর্যায়ে মুরগি শিকার করতে সক্ষম হয় বাঘ-বাঘিনী। আর এরই সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের মুহুর্মুহু করতালিতে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় পুরো চিড়িয়াখানা জুড়ে। এমন আনন্দঘন দৃশ্য সবার মতো উপভোগ করেন জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন। এই সময় তিনি বলেন, ‘চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি বাঘ এনেছি। চিড়িয়াখানার নিজস্ব অর্থায়নেই নতুন এ অতিথিদের আনা হয়েছে। এর ফলে চিড়িয়াখানায় দীর্ঘদিনের অভাব পূরণ হয়েছে। এতে চিড়িয়াখানাটি দর্শকদের কাছে যেমন আকর্ষণীয় হবে তেমনি সমৃদ্ধও হয়েছে। আশির দশকে স্থাপিত এ বিনোদন কেন্দ্রটি নিয়ে আরো নানা পরিকল্পনা আছে। আগামীতে মৌলভীবাজার থেকে হনুমানসহ বেশ কিছু পশু-পাখি আনার পাশাপাশি চিড়িয়াখানায় ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে পাখিদের অভয়ারণ্য করার পরিকল্পনাও আছে।’ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর মো. মনজুর মোরশেদ জানান, বাঘ ও বাঘিনী চেয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা ও ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় চলতি বছরের ২৫ জুন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেরাই বাঘ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। সাউথ আফ্রিকা থেকে দুটি বাঘ কেনার জন্য ১৯শে আগস্ট আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৬শে সেপ্টেম্বর বন্যপ্রাণী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফেলকন গ্রুপকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। তারাই সাউথ আফ্রিকা থেকে বাঘ দুটি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পৌঁছানোর যাবতীয় কাজটি করেছেন। চিড়িয়াখানায় আনা বাঘের বয়স ১১ মাস, বাঘিনীর বয়স ৯ মাস। সাউথ আফ্রিকা থেকে বিমানযোগে বাঘ দুটি ৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। পরে রাত পৌনে তিনটার দিকে চিড়িয়াখানার একটি টিম ট্রাকে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.