সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, উত্পাদনমুখী খাত নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুত্ সুবিধার অভাবে পূর্ণ ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। পণ্যের মানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সংকট যখন শিল্পে, তখন বিদেশি পণ্যে বাজার সয়লাব হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে নানা বাধা নিয়ে ব্যবসায়ী-অর্থনীতিবিদরা বরাবরই সরব ছিলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হলেও সংস্কার কার্যক্রমে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ফলে নতুন বিনিয়োগ যেমন নিরুত্সাহিত হচ্ছে, তেমনি বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণেও অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন না। অথচ দেশে এখন স্থিতিশীল পরিবেশ বিদ্যমান। ব্যাংকে নগদ অর্থও রয়েছে। বিনিয়োগযোগ্য অর্থ থাকার পাশাপাশি সুদের হারও কমেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে শিল্পখাতে বিদ্যুত্-জ্বালানি দুষ্প্রাপ্যতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত্ প্রাপ্যতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৮৭তম।
বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৭’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিদ্যুত্ প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে এই খারাপ অবস্থান ছাড়াও বাংলাদেশ আরো কয়েকটি ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে। ব্যবসা শুরু করতে প্রারম্ভিক প্রস্তুতিতেও দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয় উদ্যোক্তাদের। ঋণ প্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও অবস্থান আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসা করার খরচ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করেও বিশ্বব্যাংক বলেছে, ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা এবং ব্যবসার খরচ কমানোর বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপের কথা বাজেটে বলা হয়নি।
বাংলাদেশের উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ে গবেষক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, জ্বালানি সংকট উত্পাদনের গতি ব্যাহত করছে। এদিকে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। এটাও সত্য যে, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছে। কিছু ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছে, তবে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যে কর্মউদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা সময়সাপেক্ষ হলেও ইতিবাচক ফল দেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উদ্যোক্তা বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। জটিলতাগুলো দূর করতে পারলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে।
তবে ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলেছেন, প্রতিযোগী দেশগুলোতে যে হারে সংস্কার গতি পেয়েছে বাংলাদেশে তা হয়নি। বহির্বিশ্ব তো দূরের কথা, আফগানিস্তান বাদ দিলে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে সবার নীচে বাংলাদেশের অবস্থান। তাদের মতে, ব্যবসা শুরুর খরচের দিক থেকে বাংলাদেশ ব্যয়বহুল একথা বহু আগেই স্বীকৃত।
উদ্যোক্তারা বলছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ দেওয়ার কথা অনেক দিন ধরে বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাজেটে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ রাখার দরকার ছিল। কিন্তু তা না করে বরং উদ্যোক্তাদের ওপর খরচ বাড়ানো হয়েছে। যা সামাল দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। এদিকে এমনিতেই বিশ্ববাজার এখনো অর্থনৈতিক মন্দা থেকে পুরোপুরি বের হতে পারেনি। তার ওপর ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসার খরচ কমানো না হলে বেসরকারি বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়বে না। অথচ সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায়ও বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার সাত দশমিক দুই শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ আগের তুলনায় অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি প্রয়োজন হবে। সরকারকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.