স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রশাসনের উসকানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ক্ষেত্র তৈরি করে। এই কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি গোষ্ঠী মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট করে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলার ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়। নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মাঠপর্যায়ের তদন্তের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। সংগঠনটির পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জড়িত। গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য তুলে ধরে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সংগঠনটি একটি পুস্তিকায় নাসিরনগর ও গোবিন্দগঞ্জের ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ও ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে হামলার সূত্রপাত হয়। এরপর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিনিধিদল ৫ নভেম্বর নাসিরনগর ও ২১ নভেম্বর সরেজমিনে যায়। প্রতিবেদনে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার আগে ফেসবুকে কথিত ধর্মীয় অবমাননার ছবি পোস্ট, সমাবেশ ও তাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি এবং পরে হামলার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, হরিপুরের একটি দোকান থেকে রসরাজ দাসের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কথিত ধর্ম অবমাননার ছবি পোস্টের খবর পাওয়া যায় ও লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করা হয়। এই দোকানের মালিক জাহাঙ্গীর বিএনপির অনুসারী বলে জেনেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে কোন্দল বিরাজ করছিল। হরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ ও দল মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান আতিকুর রহমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন বিএনপিপন্থী সাবেক চেয়ারম্যান জালাল মিয়া ও ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. বিল্লাল মিয়া। বিল্লাল মিয়া ৩০ অক্টোবর ভোরে বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ ট্রাক স্ট্যান্ডে যান। তিনি হরিপুর থেকে নাসিরনগরের সমাবেশস্থলে লোক পাঠানোর জন্য ট্রাক ড্রাইভার ফারুকের মাধ্যমে সাতটি ট্রাক ভাড়া করেন। ফারুকের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার অলকপুর গ্রামে। এ ছাড়া বিল্লাল নিজের ট্রাকসহ আরও ছয়টি ট্রাক লোকজন বহনের জন্য ঠিক করে রাখেন। সমাবেশে যোগদানের জন্য হরিপুরসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার মাধবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা, বিজয়নগর ও আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের যুবকশ্রেণির ক্যাডারদের লাঠিসোঁটা, অস্ত্রসহ প্রস্তুত রাখা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি মূলত দুটি গ্রুপে সক্রিয়। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। আরেক পক্ষে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সভাপতি সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। হামলার সঙ্গে এই দুই পক্ষের স্থানীয় নেতাদের নামও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। অবশ্য নির্মূল কমিটির সংবাদ সম্মেলনের পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দায়িত্ব নিয়ে বলছেন নাসিরনগরসহ গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাঁর কোনো গ্রুপ নেই। যারা এসব তথ্য-উপাত্ত দেয় তারা আসলে মূল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের কোন্দল কীভাবে এখানে কাজ করেছে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের লোকজন টাকাপয়সাসহ নানাভাবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে চলে। আর এটা শুধু নাসিরনগরেই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জে হামলায় সাংসদ জড়িত: সংবাদ সম্মেলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, গোবিন্দগঞ্জের ঘটনায় স্পষ্টত স্থানীয় সাংসদ (আবুল কালাম আজাদ) ও চেয়ারম্যান (শাকিল আহমেদ ওরফে বুলবুল) জড়িত। ওই হামলাকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাংসদ আবুল কালাম আজাদ এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন (৬ নভেম্বর) তিনি টাঙ্গাইলে ছিলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.