জীবন গতিশীল। সুখ, দুঃখ, আনন্দ, হাসি, কান্না নিয়েই আমাদের জীবন। হঠাৎ যখন প্রচণ্ড আনন্দ হতাশা যখন ধেয়ে আসে, তখন দৈনন্দিন জীবনের গতি থমকে যায়। তবে সারাদিনের এই ক্লান্তি, হতাশা, মলিনতাকে পিছনে ফেলে পৌঁছে যেতে পারেন সুস্থ-শান্ত পরিবেশে। শুধুমাত্র সঠিক ডায়েট ও পর্যাপ্ত ঘুমই যথেষ্ট নয়। যদি নিয়ম করে রোজ সকালে বা সন্ধ্যায় সামান্য সময় দিতে পারেন, নিজের মনের সঠিক বিশ্রামের জন্য, তবে সাফল্য-সুখ-শান্তি ও সুস্বাস্থ্য থাকবে সমপরিমানে।
মেডিটেশনের পূর্বে :
*সুতির আরামদায়ক যে কোন পোষাকই মেডিটেশনের জন্য উপযোগী। *পরিষ্কার পাজামা-পাঞ্জাবি পরে করতে পারেন মেডিটেশন। *ট্রাউজার বা ট্রাক স্যুটও চলবে। *যেকোনো ঢিলেঢালা পোশাক পরতে পারেন। *শরীরে যেকোন অলংকার না রাখাই ভালো।
মেডিটেশন করার পদ্ধতি :
মেডিটেশন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে সহজ হল ব্রিদিং মেডিটেশন। দিনে যদি আপনি দুই থেকে তিন বার ১০-১৫ মিনিট সময় বার করতে পারেন তা হলেই ব্রিদিং মেডিটেশন করা সম্ভব। সাধারণত মেডিটেশন করতে হয় পদ্মাসন, সুখাসন, অর্ধপদ্মাসন, স্বস্তিকা আসনে বসে।
দুই হাত থাকবে দু’ধারে, ধ্যান মুদ্রায়। কোমর, কাঁধ, মাথা একটি সরল রেখায় থাকবে। শিথিল করে রাখতে হবে কাঁধ। এই ভঙ্গিতে বসে কিছুক্ষণ অন্য সব চিন্তা দূরে সরিয়ে মনকে কেন্দ্রীভূত করুন। দুর্বল, অসুস্থ শরীর মেডিটেশনের জন্য উপযোগী নয়। তাই সুস্থ হতে হবে আগে। বাদ দিতে হবে অতিরিক্ত ভোজন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুম পরিহার করতে হবে। একটি শান্ত জায়গা খুঁজে নিন যেখানে আপনি আরামে বসতে পারেবেন। দুই পা একটির উপর আরেকটি তুলে ক্রুশ করে বসুন। তবে পিঠ ও শিরদাঁড়া সোজা রেখে আপনি যেকোনো পজিশনে বসতে পারেন। পিঠ সোজা করে না বসলে ঘুম পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। দুচোখ আধা বন্ধ করে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোনিবেশ করুন। স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিন। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন না। বোঝার চেষ্টা করুন কীভাবে হাওয়া নাকের ভিতর দিয়ে ঢুকে ফুসফুসে যাচ্ছে। কীভাবে ফুসফুসে হাওয়া ভরছে আর আপনার বুক ওঠা-নামা করছে। একইভাবে যখন শ্বাস ছাড়ছেন সেই ব্যাপারটাও অনুভব করার চেষ্টা করুন। কীভাবে হাওয়া আপনার নাকের ভেতর দিয়ে আবার আপনার শরীরের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, এটা বোঝাও মেডিটেশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শ্বাস-প্রশ্বাসের এই প্রক্রিয়া ছাড়া আর কোন কিছুর উপরই মনোযোগ দেবেন না। আপনার চারপাশের পরিবেশে কী হচ্ছে তা বিন্দু মাত্র ভাবার চেষ্টা করবেন না।
মনে রাখুন : সারাদিনের কাজের চাপের কারনে আপনার মনে হতেই পারে যে মেডিটেশন আপনাকে আরও ব্যস্ত করে তুলেছে। তবে বাস্তব চিত্রটা একটু অন্যরকম। মেডিটেশন আসলে ভাবনার প্রতি আমাদের সচেতনতা বাড়ায়। মেডিটেশন করার সময় যতবার আপনার মন অন্যদিকে যাবে ততবার শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোনিবেশ করবেন। যত দিন যাবে দেখবেন যে আপনার মন সংযোগ বাড়বে এবং আপনি আরও বেশি মানসিক প্রশান্তি অনুভব করবেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.