নতুন নতুন অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জামে সক্ষমতা বাড়ছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর। ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে সেনাবাহিনীতে নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড ও ইউনিট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। নৌ-বাহিনীতে সম্প্রতি যোগ হয়েছে চীন থেকে কেনা দুটি সাবমেরিন। অন্যদিকে বিমান বাহিনীকে আরো গতিশীল করতে ৮টি যুদ্ধ বিমান (মাল্টিরোল কমবাট এয়ারক্রাফট) কেনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সব মিলিয়ে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আরো কার্যকর ও গতিশীল করতে বর্তমান সরকার গত ৭ বছরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। ৭ই ডিসেম্বর সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরে এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। পরদিন মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তরে সংসদ কার্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও একই বিষয়ের ওপর সুনির্দিষ্ট উত্তর দেন। চট্টগ্রাম-৪ আসনের এমপি দিদারুল আলম তারকাচিহ্নিত প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে কার্যকর ও গতিশীল করতে সরকার গত ৭ বছরে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। একই সঙ্গে তিনি জানতে চান, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে গতিশীল করতে সরকারের আগামীদিনের পরিকল্পনা কী কী। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী তিনি বাহিনীর বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আগামী ৩ অর্থবছরে সিলেট সেনানিবাসে ১৯টি ইউনিট/সদর দপ্তর গঠন করা হবে। ৪ অর্থবছরে রামু সেনানিবাসে গঠন করা হবে ২২টি ইউনিট/সদর দপ্তর। একই সময়ে লেবুখালী সেনানিবাসে ৪১টি ইউনিট/সদর দপ্তর গঠন করা হবে। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলায় সেনানিবাস গঠনের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১টি আরই ব্যাটালিয়ন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, সেনাবাহিনীর সেলফ প্রপেলড রেজিমেন্টকে এরইমধ্যে নতুন কেনা সেলফ প্রপেলড কামান আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল, অ্যান্টি ট্যাংক উইপন, উইপন লোকেটিং রাডার, গ্রাউন্ড সার্ভেইলেন্স রাডার, সাউন্ড রেঞ্জিং ইকুইপমেন্ট, ভূমি হতে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার, আর্মার্ড রিকভারি ভেহিক্যাল, অত্যাধুনিক সেলফ প্রোপেল্ড গান সিস্টেম, সর্ট রেঞ্জ অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, এন্টি ট্যাংক উইপন এবং মাল্টিপল লঞ্চড রকেট সিস্টেম কেনা হয়েছে। এছাড়াও সেনাবাহিনীর এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারির জন্য ভিএসহর্ড মিসাইল বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অধীনে চীন থেকে টেকনোলজি ট্রান্সফারের মাধ্যমে উৎপাদনের বিষয়টি এবং এফএম-৯০ মডেলের এয়ার ডিফেন্স স্যাম কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক এমবিটি-২০০০। চীনের তৈরি এই ট্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে ব্যবহৃত ট্যাংকের মধ্যে অত্যাধুনিক হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে অতি দ্রুততার সঙ্গে রসদ ও জনবল পরিবহনের জন্য অ্যাডহক আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের বিমানবহরে সংযোজিত হয়েছে ফ্রান্সের তৈরি দুটি ডফিন হেলিকপ্টার। এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার কিনতে চুক্তিপত্র সম্পন্ন করা হয়েছে যা, এ বছরের শেষের দিকে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের বিমানবহরে সংযোজিত হবে। নৌ-বাহিনী প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ৪টি ফ্রিগেট, ৪টি করভেট, ১টি হাইড্রোগ্রাফিক ভেসেল, ২টি এলপিসি, ৫টি পিসি, ২টি এলসিইউ, ২টি এলসিটি ও ১টি ফ্লিট ট্যাংকারসহ সর্বমোট প্রায় ২০টি ছোট-বড় যুদ্ধজাহাজ সংযোজিত হয়েছে। সমুদ্র এলাকায় দ্রুত নজরদারি, সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ অপারেশন, জরুরি সেবা ও একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় সার্বক্ষণিক নজরদারির লক্ষ্যে সংযোজিত হয়েছে ২টি হেলিকপ্টার এবং ২টি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট (এমপিএ)। নৌবাহিনীকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নতুন ঘাঁটি হিসেবে বানৌজা নির্ভীক, নেভাল এভিয়েশন কমিশনিং করা হয়েছে। এছাড়া নৌবহরের যুদ্ধক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন জাহাজে দূরপাল্লার মিসাইল ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র সংযোজন করা হয়েছে। শত্রুর বিমান ধ্বংস করার লক্ষ্যে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, শত্রুর জাহাজ ও সাবমেরিন ধ্বংস করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক টর্পেডা, শত্রুর সাবমেরিন ধ্বংস করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ডেপথ চার্জ ও আরডিসি, বিভিন্ন ক্যালিবারের কামানের বিমান ও জাহাজবিধ্বংসী গোলা, সার্ভিলেন্সের জন্য রাডার ও সেনসোরস এবং মিসাইল আক্রমণ প্রতিহত করতে আধুনিক মিসাইল বিধ্বংসী চ্যাপ/ডিকই সংযোজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, নৌবাহিনী পরিচালিত শিপইয়ার্ডসমূহ বাণিজ্যিক ও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ ও মেরামতকার্যে সক্ষমতা অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ডে ২০১৩ সালে ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে ২০১৫ সালে ২টি এলসিটি ও ২টি এলসিইউ নির্মাণ করা হয়েছে। দেশীয় শিপইয়ার্ডসমূহে ভবিষ্যতে ফ্রিগেটসহ আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ ও রপ্তানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নৌবাহিনীতে ২টি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট (এমপিএ) এবং ৪টি মাল্টিরোল মেরিটাইম হেলিকপ্টার (শিপবর্ন) কেনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০১৭-২০১৯ সালের মধ্যে সাবমেরিনের পূর্ণাঙ্গ অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ঘাঁটি নির্মাণ, প্রশিক্ষণ ও সংরক্ষণের প্রাথমিক কার্যাদি সম্পন্ন করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া সাবমেরিনের জন্য স্থায়ী ঘাঁটি নির্মাণের লক্ষ্যে চীনা কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে নৌবাহিনীর একটি এমওইউ স্বাক্ষর করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিমানবাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে কার্যকর ও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাংগঠনিক ও ভৌত অবকাঠামোগত বর্ধিতকরণ, যুগোপযোগী নতুন বিমান, রাডার, সমরাস্ত্র সংযোজন এবং পুরনো সরঞ্জামাদি আয়ুষ্কাল শেষে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনসমূহ মেটানোর সার্বিক পরিকল্পনা বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে। বিমানবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে গত ৭ বছরে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যা বহুলাংশে বাস্তবায়িত। প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে, বিমানবাহিনীকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২টি ট্রেনিং হেলিকপ্টার, ১টি শর্ট রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স রাডার সিস্টেম, ১টি রং রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স রাডার এবং ১১টি পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান কেনার চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়াও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাল্টি রোল কমবাট এয়ারক্রাফট (এমআরসিএ), ৪টি এ্যাটাক হেলিকপ্টার, ৬টি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার, ২টি মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ (এমএসএআর) হেলিকপ্টার, ১টি মিডিয়াম রেঞ্জ সারফেস টু এয়ার মিসাইল (এমএসএএম) সিস্টেম, ১টি ইউএসভি সিস্টেম কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ভবিষ্যতে মাল্টি রোল কমবাট এয়ারক্রাফট (এমআরসিএ), মিডিয়াম লিফট হেলিকপ্টার এবং মোবাইল পালস ডোপরার রাডার কেনার (এমপিডিআর) পরিকল্পনা রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.