নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নেয়া উদ্যোগের দিকে তাকিয়ে আছে জাতি। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পদের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সবার প্রত্যাশা, একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী তথা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের পথ সুগম করতে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। একটি গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন জরুরিও বটে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এখন আর নেই। ওই ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে বেশ আগেই। ফলে নির্বাচন পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। নতুন যে কমিশন গঠিত হবে, তারা ২০১৯ সালের সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করবেন। দেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসন এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে সেই নির্বাচনসহ সব নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে নির্বাচন পরিচালনাকারীদের সবার আস্থাভাজন হওয়াটা জরুরি। এজন্যই দরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন। বর্তমান ইসির গ্রহণযোগ্যতা নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে এদিকটি মাথায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ইসি গঠনে নিজ নিজ প্রস্তাব তুলে ধরবে। এগুলো থেকে যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলোর সমন্বয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসতে পারে। এটা ঠিক, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে কাজ করতে হয়। তা সত্ত্বেও ইসি গঠনে তার উদ্যোগে আশাবাদী হওয়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি ও প্রধান অভিভাবক। তিনি যেমন সাংবিধানিকভাবে নিরপেক্ষ, তেমনি সর্বমহলে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিও। তাই দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিজের বিবেকের প্রতিফলন ঘটাতে পারেন রাষ্ট্রপতি। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হলে তা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে হৃদয়ঙ্গম করানোর চেষ্টা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তা জাতির জন্য যেমন স্বস্তি এনে দেবে, তেমনি তিনি নিজেও ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন। ওই সংলাপের আলোকে তিনি একটি ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করেছিলেন। কিন্তু ওই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কাজেই এ বিষয়টি মাথায় রেখেই একটি গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনের প্রক্রিয়া নিতে হবে। নতুন ইসি গঠনে দক্ষ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের বেছে নিতে হবে। এটা সত্য, আমাদের সমাজ ব্যাপকভাবে বিভক্ত। তারপরও সমাজে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির অভাব হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। শুধু ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা নয়, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ চায়, বর্তমান সংলাপের পরিণতি যেন ইতিবাচক এবং প্রকৃতই অর্থবহ হয়। এ ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে সবাইকেই দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিতে হবে। কোনো পক্ষকেই যার যার দাবি নিয়ে অটল থাকলে চলবে না। রাষ্ট্রপতি তার প্রজ্ঞা ও বিবেক দিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা সবাইকে মেনে নিতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.