টেলিভিশন হচ্ছে বিনোদনের অন্যতম বড় মাধ্যম। এর মধ্যদিয়ে সহজেই দর্শক তাদের বিনোদনের খোরাক মেটাতে পারেন। আর সেখানেই এখন সবচেয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সমসাময়িক ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে অন্তত সেটাই বলা যায়। বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ও অস্বাভাবিক ঘটনা টিভি অঙ্গনকে অস্থির থেকে অস্থিরতর করে তুলেছে। মাস দুয়েক আগে অভিনেত্রী প্রসূন আজাদের সঙ্গে গুণী অভিনেত্রী-নির্মাতা রোকেয়া প্রাচীর দ্বন্দ্ব দেশীয় টিভি মাধ্যমে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। একটি টেলিছবিতে অভিনয় ও শিডিউল নিয়ে দুজনের এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। প্রথমে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পরস্পরের কাদা ছোড়াছুড়ি, অতঃপর সেটি অভিযোগ আকারে পৌঁছে যায় টিভি মিডিয়া সংশ্লিষ্ট তিন সংগঠনের কাছেও। শুধু তাই নয়, প্রসূনকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে অক্টোবর-নভেম্বর মাসজুড়ে মিডিয়া ছিল অস্থিরতার মধ্যে। এরই মাঝে শুরু হয় দেশীয় টিভিতে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার বন্ধের দাবিতে আন্দোলন। মোট পাঁচটি দাবি নিয়ে মাঠে নামে শিল্পী-কলাকুশলীরা। টিভি মাধ্যমের শিল্পী-কলাকুশলীদের মোট ১৪টি সংগঠন এক হয়ে নতুন নামকরণ করে এফটিপিও। সেই ব্যানারে ডাক আসে একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচির। অন্যদিকে তাদের পাশাপাশি ‘মিডিয়া ইউনিটি’ নামের আরেকটি সংগঠন বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের দাবিতে নতুন আন্দোলনে নামে। দুই সংগঠনের কয়েক দফা দাবি-আন্দোলনের মুখে আরো অস্থির হয়ে পড়ে পুরো টিভি অঙ্গন। অস্থিরতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সমাবেশের ডাক দেয় এফটিপিও। ৩০শে নভেম্বর শহীদ মিনারে দিনব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে তারা। সেদিনই ঘোষণা আসে যদি ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি সিরিয়াল প্রচার বন্ধ না করে তাহলে প্রতিটি চ্যানেলের সামনে অবস্থান নেয়া হবে। সেই ধারাবাহিকতায় এফটিপিও গত ১৯শে ডিসেম্বর দীপ্ত টিভির সামনে ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিয়াল বন্ধ করার দাবিতে অবস্থান নেয়। মোট দুই ঘণ্টার সেই অবস্থানে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে নানান কথা। প্রতিবাদের ভাষায় শোনা যায় দীপ্ত টিভি বন্ধের দাবিও। এরই ধারাবাহিকতায় পরদিন একুশে টিভির সামনে অবস্থান নেয় এফটিপিও। চ্যানেলটিতে ‘সীমান্তের সুলতান’ ও ‘হাতিম’ নামে দুটি সিরিয়াল প্রচার বন্ধের দাবিতে সেদিন জড়ো হন শিল্পী-কলাকুশলীরা। ২০শে ডিসেম্বর ঘোষণা আসে শিগগিরই যদি বিদেশি সিরিয়াল প্রচার বন্ধ না হয় তাহলে আন্দোলন আরো কঠোর হবে। তবে শিল্পী-কলাকুশলীদের এসব আন্দোলনে তেমন সাড়া মিলছে না চ্যানেলগুলোর তরফ থেকে। একুশে ও দীপ্তর পাশাপাশি গাজী টিভি, এনটিভি, এসএ টিভি, মাছরাঙা সবাই বিদেশি সিরিয়াল নিয়মিত প্রচার করে যাচ্ছে। এদিকে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার বন্ধের আন্দোলন প্রথমদিকে জমে উঠলেও এখন অনেকটা গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, একটা সময় বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে বিদেশি টিভি সিরিয়াল ছিল দারুণ জনপ্রিয়। ম্যাকগাইভার, এক্স ফাইল, চার্লিস অ্যাঞ্জেলস, ফলগাই, রুটস, হারকিউলিক্সসহ অনেক বিদেশি সিরিয়াল দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় চ্যানেল বিটিভিতে প্রচার হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় প্রচার হলেও দর্শকের আকর্ষণের জায়গা ছিল নির্মাণশৈলী। তাই তাদের আগ্রহেরও কমতি ছিল না। এখন কেন বিদেশি সিরিয়াল নিয়ে এত মাথাব্যথা? সমালোচকরা এও বলছেন, ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ না করে মানসম্মত নাটক নির্মাণ আর সেটা সঠিকভাবে সুষ্ঠু নিয়মনীতি মেনে প্রচার করলেই সমস্যার সমাধান আসবে। এসব নিয়ে চলছে টিভি অঙ্গনে যত অস্থিরতা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশীয় নাটক কিংবা অনুষ্ঠানের জৌলুস রক্ষা করা যায়নি। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন প্রচার, মানহীন অনুষ্ঠান এমনকি অনুষ্ঠান প্রচারে কোনো নিয়মনীতি রক্ষা না করতে পারায় দর্শক হারাতে শুরু করে। বিনোদনের খোরাক মেটাতে দর্শক বেছে নেয় বিদেশি তথা ভারতীয় চ্যানেল। বর্তমানে দেশের ২৫-২৬টি টিভি চ্যানেল থাকার পরও দেশের একশ্রেণির টিভি দর্শককে দেশীয় অনুষ্ঠানমুখী করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে টিভি অঙ্গনে অস্থিরতা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। নাট্যবোদ্ধারা বলছেন, টিভি অঙ্গনের এ অস্থিরতা শিগগিরই না কাটিয়ে উঠলে আরো ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে বিনোদনের সবচেয়ে বড় এ মাধ্যমটি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.